পুঁজিবাজার চাঙা রাখতে করমুক্ত লভ্যাংশসীমা বাড়ানো প্রয়োজন

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করতে নতুন অর্থবছরের (২০১৭-১৮) বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ঘোষিত নগদ লভ্যাংশ আয়ের করমুক্ত সীমা বাড়ানো জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয় করমুক্ত সুবিধাকে এক লাখ টাকায় উন্নীত করলে পুঁজিবাজার দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীল হবে বলে মনে করছেন তারা।

নতুন বাজেটে করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা এক লাখ টাকায় উন্নীত করার দাবি জানিয়েছে ডিএসই। পুঁজিবাজারে ২০১০-এর ধসে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে সরকার করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা বাড়াতে পারে। এতে করে বিনিয়োগকারীরা বাজারে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহী হবেন। আর বিনিয়োগ বাড়লে পুঁজিবাজারের গতিশীলতাও বাড়বে। তাই পুঁজিবাজারের স্বার্থে করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা বাড়ানোর দাবি ডিএসই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।

করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা বাড়ানো হলে প্রাথমিকভাবে সরকারের রাজস্ব কমলেও পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়ে যাবে, আর তখন সরকারের রাজস্ব কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন ডিএসই’র সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো পুঁজিবাজারে করমুক্ত লভ্যাংশ এত কম হওয়া উচিত নয়। এটা তিন লাখ টাকা করা হলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আকৃষ্ট হবেন। সরকার এটি বিবেচনা করলে দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজার ভালো হবে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ হিসেবে ২৫ হাজার টাকা পেলেই সরকারকে ২০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। বাজারে লভ্যাংশ হিসেবে যে টাকা পাওয়া যায় তা শেয়ারের দামের তুলনায় খুবই কম। তাছাড়া লভ্যাংশ পেলেই যে বিনিয়োগকারী সব সময় মুনাফা করতে পারেন সেটিও ঠিক নয়। কারণ লভ্যাংশ দেওয়ার পর অনেক সময় কোম্পানির শেয়ারের দাম অনেক কমে যায়।

এ প্রসঙ্গে ডিএসই’র সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘নতুন ও ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে আকৃষ্ট করতে করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা বাড়ানোর প্রস্তাবটি গত কয়েক বছরের। বিনিয়োগকারীদের এক লাখ টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয় করমুক্ত রাখা হলে মানুষ শেয়ার ধরে রাখতে আগ্রহী হবেন।’ এর ৬ বাইরেও বাজারকে কার্যকর ও গতিশীল করতে  আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় পাঁচ বছরের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জকে শতভাগ আয়কর অব্যাহতি, শেয়ার লেনদেনে ব্রোকারেজ হাউজের করহার কমানো, সব ধরনের সিকিউরিটিজের স্ট্যাম্প ডিউটি বাদ দেয়ার দাবি জানান তিনি।

বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ করের বিষয়ে বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ব্যাংকের আমানতের সুদ হার কম বলে মানুষ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছে। কোনো কোম্পানির শেয়ার ধারণ করলেও খুব কম লভ্যাংশ পাওয়া যায়। মাত্র ২৫ হাজার টাকার বেশি লভ্যাংশ পেলেই কর দিতে হচ্ছে। এর সীমা অন্তত লাখ টাকার ওপরে হওয়া জরুরি। বিশ্বর অন্যান্য দেশে করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা অনেক বেশি। এ সীমা বাড়ালে সরকারে রাজস্ব আয় আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।

আতাউর রহমান নামের একজন বিনিয়োগকারী বলেন, ‘করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা বাড়ানো হলে পুঁজিবাজারের প্রতি মানুষ বেশি আকৃষ্ট হবেন। তখন লেনদেন বাড়বে। স্বাভাবিকভাবেই লেনদেন বাড়লে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে। তাই লভ্যাংশ আয়ের ক্ষেত্রে সরকারের রাজস্ব কমলেও লেনদেনের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আদায় বেড়ে যাবে। এসব বিবেচনায় করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা বাড়াতে সরকারের উদ্যোগ জরুরি।’

জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছিল ডিএসই। এর প্রেক্ষিতে বাজেটে করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ২৫ হাজার টাকা করা হয়। যা আগের অর্থবছরে ছিল ২০ হাজার টাকা এবং তার আগের বছর ছিল ১৫ হাজার টাকা। তবে চলতি অর্থবছরে ২০১১৬-১৭ অর্থবছরে এর সীমা আর বাড়ানো হয়নি।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০