ভরাডুবির শঙ্কায় নির্বাচনে আসছে না বিএনপি: ওবায়দুল কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির আন্দোলনের হাতিয়ারে মরিচা ধরেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপির কথিত জোয়ার এখন ভাটায় পরিণত হয়েছে। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবির আশঙ্কা বিএনপিকে আগেই পেয়ে বসেছে। তাই তাদেরই হƒদকম্পন শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার বাসভবন থেকে ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।

‘বিএনপির জনসমর্থনের জোয়ারে সরকারের হƒদকম্পন শুরু হয়েছে’- বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, এসব সৃজনশীল কথামালার চাতুরিতে ফখরুল ইসলাম আলমগীর আত্মতৃপ্তি বোধ করতে পারেন। কর্মীদের রোষানল থেকে নিজেদের সুরক্ষার জন্য কল্পনার ফানুস ওড়াতে পারেন। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে তাদের বক্তব্যে বৈপরীত্য আছে, তা দেশের মানুষ ঠিকই জানেন।

তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিদিনই নতুন নতুন তথ্য উপস্থাপন করেন আর মাঝে মাঝে তার বাকচাতুর্য কল্পনাকেও হার মানায়।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ভয়ে কাঁপে না, চ্যালেঞ্জ আর লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়াই বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি। সেই রাজনীতিই আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করে যাচ্ছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, এ দেশের রাজপথ জানে আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রামের বীরত্বগাথা আর সমৃদ্ধ ইতিহাস। জনগণ বিএনপির হঠকারিতা, গণতন্ত্র হত্যা, ষড়যন্ত্র, লুটপাট আর সুবিধাবাদী রাজনীতির কথাও জানে।

বিএনপির জনসমর্থনের জোয়ার তো গত ১৩ বছরে কোনো নির্বাচনে দেখা যায়নি দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা ভরাডুবির ভয়ে এখন নির্বাচনবিমুখ। তাই রাজপথ আর ভোটের ময়দান ছেড়ে গণমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজনীতিকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে।

শেখ হাসিনা সরকার আর আওয়ামী লীগকে হুমকি-ধামকি দিয়ে লাভ নেই জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের যে অপচেষ্টা করছেন তা আমাদের অজানা নেই।

বিএনপির সবকিছুতেই শর্ত এবং মামার বাড়ির আবদার উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করলে নাকি তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন। আসলে বিএনপি ভালো করেই জানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি একটি মীমাংসিত বিষয়।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কে বাতিল করেছে?

উচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়েছে, এ পদ্ধতি ছিল একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা, দীর্ঘ মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চলতে পারে না।

ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের গণতন্ত্র যখন এগিয়ে যায়, তখন সরকার ও নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর আস্থা ফিরতে শুরু করে। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, এ প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।

তিনি বলেন, যারা বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে বহুদলীয় তামাশা আর সুবিধাবাদ চালু করেছিল, যাদের দলের অভ্যন্তরে নেই গণতন্ত্রের চর্চা, আজ তারাই গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বিএনপি মহাসচিবকে প্রশ্ন করে বলেন, আপনি নির্বাচিত হয়েও কেন সংসদে গেলেন না? এটা কোন গণতন্ত্র? ভোটাধিকার নিয়ে তো আপনারাই ছিনিমিনি খেলেছিলেন।

‘কারা হ্যাঁ-না ভোটের প্রহসন করেছিল? কারা সেনাপ্রধান পদ থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছিলেন? কারা ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিলেন? কারা এক কোটি ২৭ লাখ ভুয়া ভোটার সৃষ্টি করে জনগণের অধিকার হরণ করতে চেয়েছিলেন? এতসব প্রশ্নের জবাব আশা করি বিএনপি মহাসচিব দেবেন।’

তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সময়মতো সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। মীমাংসিত বিষয় নিয়ে অযথা মাঠ গরম না করতে বিএনপি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

পরে দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ফরম সংগ্রহের চিত্র দেখতে যান ওবায়দুল কাদের।

এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং কোনো ধরনের লোকসমাগম ছাড়া প্রার্থী নিজে অথবা প্রার্থীর একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে হবে।

আবেদনপত্র সংগ্রহের সময় সব প্রার্থীকে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সঙ্গে আনতে হবে এবং আগামী ৬ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে হবে।

বিএনপিসহ সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে বদ্ধপরিকর। সরকার সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

ওবায়দুল কাদের আবারও হুশিয়ার করে আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কোনো মদত ও প্রচারণা থেকে বিরত থাকতে হবে। দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে সবাইকে একযোগে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহী প্রার্থীদের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দেয়ার তারিখ নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ, যা ৬ অক্টোবর বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলবে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী প্রার্থীদের ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০