বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড হলেও বাংলাদেশে বাটার বিরুদ্ধে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার যে অভিযোগ উঠেছে, তা অপ্রত্যাশিত। এর মধ্য দিয়ে এ ব্র্যান্ডের সুনাম শুধু ক্ষুন্ন হচ্ছে না, কোম্পানিটি যে এরই মধ্যে গ্রাহক হারাতে শুরু করেছে, গত পাঁচ বছরে বিক্রীত জুতার পরিসংখ্যানেই তা স্পষ্ট। অন্যান্য কারণে টার্নওভারে এর প্রভাব না পড়ায় প্রতিষ্ঠানটির নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি কতটুকু গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন, তা আমরা জানি না। তবে এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের। কারণ এ থেকে তার বিরুদ্ধে নিম্নমানের পণ্য বেশি দামে বিক্রির যে অভিযোগ বিভিন্ন মহল থেকে তোলা হয়েছে, তা আরও জোরালো হয় বৈকি। আমাদের প্রতিবেদকও সরেজমিনে রাজধানীর একটি শোরুমে গিয়ে যা দেখেছেন, তাতে বিভিন্ন কোম্পানির জুতা বিক্রি হচ্ছে বাটার ব্র্যান্ডিংয়ে। শুধু তা-ই নয়, চীন থেকে আমদানি করা বেনামি ব্র্যান্ডের নিম্নমানের জুতাও নাকি বাংলাদেশি বিক্রেতারা চালিয়ে দিচ্ছেন বাটার নামে। বিক্রি-পরবর্তী সেবায়ও চলছে টালবাহানা। এ থেকে বোঝা যায়, গ্রাহকদের সঙ্গে বাটা ও তার পরিবেশকদের এমন প্রতারণা ইচ্ছাকৃত। একটি নামি প্রতিষ্ঠানের এমন আচরণ গ্রাহককে শুধু আশাহতই করে না, সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডের ওপর তৈরি হয় আস্থাহীনতা।
গতকালের শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দুবছর আগে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ছিল এক হাজার ৪১৭ টাকা। ভালো লভ্যাংশ দেওয়ার পরও এখন সেই শেয়ার বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১৮৫ টাকায়। শুধু গ্রাহক নন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরাও যে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে আর আস্থা রাখতে পারছেন না, তা বোঝা যায় উল্লিখিত তথ্য থেকে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটির নীতিনির্ধারকদের একটি তথ্য মনে রাখা দরকার, সর্বশেষ ৩২০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার পরও গত এক বছরে এ কোম্পানির শেয়ার বিক্রি হয়েছে আগের চেয়ে কম মূল্যে; সর্বনিন্ম এক হাজার ১১০ টাকায়। এ অবস্থায় কোম্পানিটি যদি বাংলাদেশি গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা বন্ধে মনোযোগী না হয়, তাহলে এর প্রভাব কতটা নেতিবাচক হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। বাটার মতো একটি কোম্পানি এমন নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হোক, তা অবশ্য সংশ্লিষ্ট কারও কাম্য হওয়ার কথা নয়।
বাংলাদেশে বাটা যখন পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত হয়, তখন দেশের বাজারে তার প্রতিযোগী ছিল না বললেই চলে। সময়ের পরিবর্তনে এ ব্র্যান্ডের প্রতিযোগী তৈরি হয়েছে বাজারের নিয়মেই। এ অবস্থায় টিকে থাকতে হলে বাটাকে উৎপাদন করতে হবে মানসম্পন্ন ও হাল ফ্যাশনের পণ্য। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশি নীতিনির্ধারকদের সেদিকে দৃষ্টি আছে বলে মনে হয় না। শোরুমে বাটা ব্র্যান্ডের নামে যেসব জুতা প্রদর্শন করা হয়, সেগুলোর মডেল এখন ক্রেতাদের তেমন আকর্ষণ করে না। শুধু নিম্নমান নয়, ক্রেতারা যে এখন বাটাবিমুখ হচ্ছেন এটাও তার অন্যতম কারণ। আমরা চাইবো, এদিকেও নজর থাকুক প্রতিষ্ঠানটির নীতিনির্ধারকদের। মানসম্পন্ন ও হাল ফ্যাশনের পণ্য পেলে ক্রেতারা বাটার দিকে মুখ ফেরাবে নিজ থেকেই।
গ্রাহকের আস্থা হারানো একটি কোম্পানির জন্য যত সহজ, অর্জন ততই কঠিন। নি¤œমানের পণ্য সরবরাহ করায় এখন বাটার প্রতি মানুষের আস্থায় যেমন চির ধরেছে, অন্য কোম্পানির ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটতো বলে মনে হয় না। সংশ্লিষ্ট সবার এটা মনে রাখা ভালো হবে, ব্র্যান্ডের প্রতি আকর্ষণ থাকলেও সচেতনরা পণ্যের মানের ব্যাপারে কখনও উদাসীন থাকেন না। আর নামি ব্র্যান্ডের কাছে কোনো গ্রাহক যদি প্রতারিত হন, তাহলে তা প্রভাবিত করে ব্যক্তির নিকটজনদেরও। আস্থা হারানোর এই জ্যামিতিক প্রভাব সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পক্ষে কাটিয়ে ওঠা হয়ে পড়ে মুশকিল। বাটার এ অভিজ্ঞতা থেকে অন্য ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলোও সতর্ক হোক, সে প্রত্যাশা করি।
Add Comment