ইন্টারনেটে যুক্ত থাকা মানে বিশ্বের সব কম্পিউটার সার্ভারের সঙ্গে ব্যবহারকারীকে যুক্ত রাখা। এটি এখন নিছক যোগাযোগের মাধ্যম নয়; এর গুরুত্ব ও বিস্তৃতি এত বেশি যে, ইন্টারনেট ছাড়া এক মুহূর্তও যেন চলতে পারে না বিশ্ব। আমরাও এর বাইরে নই। কম্পিউটার তো বটেই, স্মার্টফোনে ইন্টারনেট সেবার সম্প্রসারণ হয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকার ছোট দোকানেও এমবি কার্ড এখন সুলভ। এমন কোনো প্রবাসী খুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি দেশে স্বজনদের সঙ্গে ইমো, ভাইবার বা স্কাইপেতে কথা বলেননি; ভিডিও কল করেন না। কিন্তু দেশে ফোরজি সেবা চালু থাকলেও মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে গ্রাহকদের ভোগান্তির শেষ নেই। গ্রাহকদের বিড়ম্বনা কমাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সময় সময় নির্দেশনা দিলেও তা যথানিয়মে পরিপালিত হয় না।
গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘ইন্টারনেট সংযোগে বিটিআরসির নতুন নির্দেশনা’ শীর্ষক প্রতিবেদন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে বলেই প্রতীয়মান। নির্দেশনা অনুযায়ী এক দিন ইন্টারনেট না থাকলে গ্রাহকের ৫০ শতাংশ বিল নিতে পারবে না সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান।
বিটিআরসি’র নির্দেশনা অনুযায়ী, টানা দুদিন সেবা বিচ্ছিন্ন থাকলে মোট বিলের ৮০ শতাংশ মাসিক বিল ও টানা তিন দিন বন্ধ থাকলে গ্রাহকের কাছ থেকে পুরো মাসের কোনো বিল নেয়া যাবে না।
প্রায়ই অভিযোগ শোনা যায়, গ্রাহক নয়, সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থে কাজ করছে বিটিআরসি। নতুন নির্দেশনা যথারীতি পরিপালিত হলে ওই অভিযোগ থেকে সংস্থাটি মুক্ত হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
ইন্টারনেট সেবার মান বাড়াতে তদারকি বাড়াতে পারে বিটিআরসি। গ্রাহকের অভিযোগ যাচাই এবং সেবার মান ঠিক আছে কি না, তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হলে গ্রাহকের ভোগান্তি কমবে। কেনা ইন্টারনেট প্যাকেজ পুরো ব্যবহার করতে পারেন না, এমন অভিযোগও কম সময়ে নিষ্পত্তি করতে হবে।
আধুনিক যুগে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের যেসব উদ্ভাবন মানবসভ্যতাকে সমৃদ্ধ করেছে, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সেগুলোর প্রথম দিকে থাকবে। যেসব দেশে দ্রুতগতির নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে সেসব দেশ ইন্টারনেটনির্ভর সেবা ও কর্মসংস্থানে এগিয়ে। ফ্রিল্যান্স ও অনলাইন ব্যবসা তো ইন্টারনেট ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। কম্পিউটার, ল্যাপটপ হাতের মুঠোয় বহন করা সম্ভব নয়। তাই এ ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের বিকল্প নেই। ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যম, অনলাইন কেনাকাটা, ব্যাংকিং, পরিষেবার টিকিট বুকিং সর্বত্রই ইন্টারনেট অপরিহার্য।
দেশ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতিতে এখনও অনেক পিছিয়ে। এমন গতি দিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন হবে। সুলভে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবাদান নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট অংশীজন দায়িত্বশীল হবে বলেই প্রত্যাশা। নির্দেশনা জারির পর তদারকিও করতে হবে। আমাদের দেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সরকারি নির্দেশনা-নীতিমালা পরিপালনের দৃষ্টান্ত খুব কম। তাই নির্দেশনা যথানিয়মে পরিপালিত হচ্ছে কি না, সেটিও নজরদারি করতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে।