অবৈধ সুদের কারবার বন্ধে আশু পদক্ষেপ নিন

সাধারণ মানুষ কতভাবে যে প্রতারিত হচ্ছে, তার ইয়ত্তা নেই। প্রতারকরা যেন দোকান খুলে বসেছে। দাদন ব্যবসায়ী, ভুঁইফোঁড় এনজিও, এমএলএম, কথিত কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রভৃতির পর ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারণ মানুষ। অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতারক উদ্যোক্তাদের ধরপাকড় চলছে। প্রতারণার নতুন নতুন ধরনের কথা আসছে গণমাধ্যমে।

গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধ সুদের কারবারের দায়ে চীনের দুই নাগরিকসহ ৭ জনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তাতে আমরা জেনেছি, অ্যাপভিত্তিক ‘ডিজিটাল মাইক্রোফাইন্যান্সের’ নামে অবৈধ সুদের কারবারে জড়িত ছিল ওই প্রতারক চক্র।

মামলার এজাহারে বলা হয়, সরকারি অনুমোদন ছাড়া থান্ডার লাইট টেকনোলজি লিমিটেড, নিউ ভিশন ফিনটেক লিমিটেড ও বেসিক ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির নামে এসব ব্যক্তি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। তারা টিকালা, ক্যাশম্যান, র‌্যাপিড ক্যাশ, আমার ক্যাশের মাধ্যমে জামানতবিহীন ঋণ দেয়ার নামে অতিরিক্ত হারে সুদের কারবার করে বলে অভিযোগ করা হয়। এসব অ্যাপের সার্ভার চীনে অবস্থিত এবং সেখানে থেকে ব্যবসা পরিচালিত হয়। কিছু চীনা নাগরিক বাংলাদেশি নাগরিকদের সহায়তার নামে এসব অ্যাপের মাধ্যমে জামানতবিহীন স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার প্রলোভনে গ্রাহক আকৃষ্ট করে। তাদের বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে গ্রাহকরা ঋণ নিয়ে স্বল্প সুদের পরিবর্তে উচ্চহারে সুদ দিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন।

শুধু আর্থিকভাবে প্রতারিত হওয়া নয়, নিজের অজান্তেই ‘ডিজিটাল জালিয়াতির’ শিকার হচ্ছেন তারা। কেননা গ্রাহকরা এসব অ্যাপ ইনস্টল করলেই ক্যালেন্ডারের ইভেন্ট পড়া, গ্রাহকের অনুমতি ছাড়া দূর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মোবাইল ক্যামেরা ব্যবহার করে ছবি ও ভিডিও ধারণ, মোবাইলের কন্টাক্ট পড়াসহ মোবাইল ফোনের অবস্থান নির্ণয় করার যায়। ফোনের তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষিত মেসেজ পড়া, পরিবর্তন করার অনুমতি নিয়ে নেয়। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য হুমকিতে পড়ে।

‘ডিজিটাল মাইক্রোফাইন্যান্স’কে প্রতারণার নতুন সংস্করণ বলা যায়। প্রতারক চক্রের অভিসন্ধান একজন মানুষ কী করে বুঝবেন। যখন বুঝবেন তখন তিনি প্রতারিত এবং প্রতারকও ধরাছোঁয়ার বাইরে, ভিনদেশে। শুক্রবার বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ই-কমার্সে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের দায় সরকার নেবে না। তার যুক্তি, ‘গ্রাহকরা আসল মূল্যের অর্ধেক দামে পণ্য পাওয়ার প্রলোভনে পড়ে অর্থলগ্নি করেছিল। প্রলোভনে পড়ে অর্থলগ্নি করলে সরকার দায়ী নয়, এটি সত্য। সরকার দায়ী নয় বলে এমন কথা বলা ঠিক হবে না, যাতে প্রতারকরা নিরাপদ বোধ করেন। লোভের দায় নাগরিকের কিন্তু প্রতারণা রোধে সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি অনুমোদন ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠান অর্থলগ্নি করে কীভাবে?

দুই লাখ টাকার মোটরসাইকেল যারা এক লাখ ২০ হাজার টাকায় কিনতে চায়, তারা হয়তো লোভী। কিন্তু উপরিউক্ত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তারা ৩ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন, তবুও ঋণ শোধ হয়নি। কেউ যেন প্রতারণামূলক ব্যবসা প্রকাশ্যে করতে না পারে, বিজ্ঞাপন দিতে না পারে অন্তত সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০