শেয়ার বিজ ডেস্ক: দীর্ঘ মেয়াদে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে রূপপুরের পর আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে সেজন্য জায়গা খোঁজার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশকে যেন আর কখনও পিছিয়ে পড়তে না হয়, এ দেশের ওপর আর কখনও যেন কোনো শকুনির থাবা না পড়ে, সেজন্য সরকার বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে।
গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল বা পরমাণু চুল্লিপাত্র স্থাপনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সূত্র: বিডিনিউজ
রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল হলো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র। এর ভেতর ইউরেনিয়াম থেকে শক্তি উৎপাদন হবে, যা কাজে লাগিয়ে তৈরি হবে বিদ্যুৎ। রিঅ্যাক্টরই হলো একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রাণ। প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, রিঅ্যাক্টর স্থাপনের পর প্রকল্পের কাজ শেষ করতে খুব বেশি সময় লাগবে না। প্রথম ইউনিটের ৫০ শতাংশ কাজ চলতি বছরই শেষ হবে।
সরকার আশা করছে, ২০২৩ সালের এপ্রিলে রূপপুরের ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা যাবে। সব ঠিক থাকলে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা যাবে।
রূপপুরের কাজ শেষ হলে আরও একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করার ইচ্ছার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দক্ষিণাঞ্চলে জায়গা খুঁজছি। দক্ষিণাঞ্চলে শক্ত মাটিওয়ালা জায়গা পাওয়া খুব কঠিন। তারপরও বিভিন্ন জায়গায় আমরা সার্ভে করছি যে আরেকটা পাওয়ার প্লান্ট আমরা করব।
তিনি বলেন, এখন যদি আমরা আরেকটা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট করতে পারি, তাহলে বিদ্যুতের জন্য আর কোনো অসুবিধা আমাদের হবে না। তারপরও আমরা বহুমুখী বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাচ্ছি এজন্য যে বিদ্যুৎ সুবিধাটা মানুষ যেন পায়, এটা যেন অব্যাহত থাকে।
২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুরে পরমাণু চুল্লির জন্য প্রথম ইউনিটের কংক্রিটের মূল স্থাপনা নির্মাণের উদ্বোধন করেছিলেন, যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল নির্মাণ পর্বের কাজ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়া। পরমাণু শক্তি আমরা শান্তির জন্য ব্যবহার করছি।
তিনি বলেন, সরকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জš§শতবার্ষিকী উদ্যাপন করছে। পাশাপাশি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপিত হচ্ছে এ বছর। একই সময় নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গৌরবের।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের জন্য আজকে এটা সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ দিবস। আজকের এই দিনটি শুধু বাংলাদেশ নয়, আমার ব্যক্তিগত জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেরেন্দ্রর জন্য কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ২০১৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও তার কথা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে আমার কতগুলো প্রশ্ন ছিল, আমরা এটা করার পর এটার নিরাপত্তা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। কারণ বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ, এখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করাটা সম্ভব নয়। আমাদের যে চুক্তি হয়, তাতে এটাও নিশ্চিত করা হয়, এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সব সময় রাশিয়া নিজেই করবে। সেই বিষয়গুলো আমরা নিশ্চিত করি।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের নিজস্ব দক্ষ জনবলও তৈরি হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে যারা বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী বা যারা নিউক্লিয়ার বিষয়ে কাজ করেন, সবারই কিন্তু একটা অভিজ্ঞতা হলো। তাদের ট্রেনিং করাতে হচ্ছে। তাদের রাশিয়া ও ইন্ডিয়ায় ট্রেনিং করাচ্ছি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আইএইএর সঙ্গে চুক্তি সই, বাংলাদেশ অ্যাটমিক অ্যানার্জি কমিশন গঠনসহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনকও অনেক উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ৭৫ সালে জাতির জনককে হত্যার পর এ উদ্যোগটাই থেমে যায়। যদি জাতির জনক বেঁচে থাকতেন, তাহলে এটা আমরা আরও অনেক আগে করতে পারতাম।
সরকারপ্রধান বলেন, আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। কিন্তু এখানে থেমে গেলে চলবে না। ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ আমরা করব। ২০৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার শতবর্ষ উদ্যাপন হবে। বিশেষ করে নতুন প্রজš§ সুন্দর দেশ, উন্নত দেশ, সমৃদ্ধশালী দেশ, আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন একটি দেশ হিসেবেই আমাদের স্বাধীনতার শতবর্ষ উদ্যাপন করবে।
বাংলাদেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে রুশ সহায়তায়। দেশটির রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ, এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লোশকিন এবং বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান রূপপুরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।