সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের রেকর্ড মূল্যস্ফীতি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভোক্তাদের জন্য তেমন কোনো সুখবর বয়ে আনতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি। মূল্যস্ফীতির চাপে দিন দিন মূল্য হারাচ্ছে তাদের কষ্টে উপার্জিত ডলার। বিভিন্ন জরিপেও মিলছে এর সত্যতা। যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তামূল্য সূচক বা কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে সূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক চার শতাংশ। তার আগের মাস আগস্টেও বেড়েছিল শূন্য দশমিক তিন শতাংশ। সব মিলিয়ে গত ১২ মাসে দেশটির ভোক্তাদের খরচ (সিপিআই) বেড়ে পাঁচ দশমিক চার শতাংশে পৌঁছেছে, যা ২০০৮ সালের পর গত ১৩ বছরে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি। খবর: আল জাজিরা, ওয়াশিংটন পোস্ট।

স্থানীয় সময় গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটেস্টিকস (বিএলএস) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে দেশটিতে নতুন গাড়ি, খাদ্যপণ্য, গ্যাস ও রেস্টুরেন্টের খাবার প্রায় সব খাতের দাম আগস্ট থেকে শূন্য দশমিক চার শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

দেশটির লেবার ডিপার্টমেন্ট বলছে, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জ্বালানির দামও। সেপ্টেম্বরে পেট্রোলের দাম বেড়েছে আগের মাসে চেয়ে এক দশমিক দুই শতাংশ। এছাড়া অন্যান্য জ্বালানির দামও তিন দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে সেপ্টেম্বরে বেড়ে যাওয়া সিপিআই সূচকের অর্ধেকের বেশি অবদান মূলত দুই মৌলিক খাত খাদ্য ও আবাসন খরচের। খাদ্য সূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। অপরদিকে দেশটির আবাসনের খরচ বেড়েছে শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ।

‘আমরা এরই মধ্যে অর্থনীতিতে আবাসনের খরচ বেড়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়া দেখতে পাচ্ছি। সিপিআই সূচকে এ আবাসনের খরচের ওঠানামা সরাসরি প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি নিজেদের গ্রাহকদের প্রতি লেখা নোটে এমনটাই জানিয়েছেন ব্রিটেনের খ্যাতনামা অর্থনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটল ইকোনমিকসের যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান অর্থনীতিবিদ পল অ্যাশওয়ার্থ। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কোর ইনডেস্ক বা মৌলিক সূচকের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ নির্ভর করে আবাসনের খরচের ওপর।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে গত সেপ্টেম্বরে মৌলিক সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে আগের মাসের থেকে শূন্য দশমিক দুই শতাংশ। তার আগে আগস্ট মাসেও এ সূচক বেড়েছিল শূন্য দশমিক এক শতাংশ। মূলত গত বছরের কভিড লকডাউনের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এ মূল্যস্ফীতি।

গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার সময় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি দেয়া সরকারি নগদ আর্থিক সহায়তা, করোনার কারণে উদ্ভূত বিশ্বজুড়ে সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থার

জট ও কাঁচামালের সরবরাহ স্বল্পতা বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পেছনে দায়ী মূলত এ তিনটি বিষয়।

অর্থনীতির এ পরিস্থিতি বাড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা পরিচালনার খরচ। চূড়ান্ত পর্যায়ে এ ব্যয়বৃদ্ধির কুফল গিয়ে পড়ছে ভোক্তাদের ঘাড়ে।

এদিকে করোনার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের চাকরির বাজারে কর্মিস্বল্পতা বিরাজ করছে। গত বছরের কভিড লকডাউনের সময় প্রায় ২২ মিলিয়ন লোক চাকরি হারালেও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে ঘাটতি রয়েছে পাঁচ মিলিয়ন কর্মীর।

যুক্তরাষ্ট্রে গত আগস্ট মাসেও চাকরি ছেড়েছে প্রায় ৪৩ লাখ কর্মী। এত বিপুলসংখ্যক মানুষের চাকরি ছেড়ে থাকা এবং এত বিপুলসংখ্যক কর্মীর ঘাটতিই মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের পথে বড় বাধা।

গত সেপ্টেম্বরেও নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মিস্বল্পতার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকেরও বেশি ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। সম্প্রতি এক জরিপে এ তথ্য জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ইন্ডিপেনডেন্ট বিজনেস।

এ পরিস্থিতিতে কর্মী আকর্ষণ করতে বিভিন্ন ধরনের ইনসেনটিভ ও বেতন বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ নিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এতে বেড়ে যাচ্ছে তাদের ব্যবসা পরিচালনার খরচ। দিনশেষে এ ব্যয়বৃদ্ধির বোঝাটা চাপছে সাধারণ ভোক্তাদের ঘাড়ে।

এদিকে করোনা পরিস্থিতি প্রভাব ফেলছে কর্মীদের সামগ্রিক কর্ম মনোভাবে। করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ভয়, শিশুদের ডে কেয়ার কিংবা অন্যভাবে দেখাশোনা করার সুযোগ কমে যাওয়া এবং সবার অ্যাকাউন্টে সরাসরি যাওয়া সরকারি নগদ আর্থিক সহায়তা আবার চাকরিতে ফেরত আসার ব্যাপারে চাকরি ছেড়ে যাওয়া কর্মীদের অনাগ্রহী করে তুলছে। সব মিলিয়ে সর্বশেষ সিপিআই সূচক সুস্পষ্টভাবেই দেখাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপর করোনার প্রভাব।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০