নিজস্ব প্রতিবেদক: সময়োপযোগী করসেবা প্রদানে কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন অপরিহার্য। সাথে প্রযুক্তির সংস্পর্শ নিতে হবে। করতে হবে মানসিকতার পরিবর্তন। কর্মকর্তা যত বেশি দক্ষ হবে, তত বেশি কর সেবা প্রদানের সঙ্গে বাড়বে রাজস্ব আহরণ। করসেবা প্রদান আর কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)-আয়কর, শুরু হয়েছে ১১ দিনব্যাপী অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ। মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) সেগুনবাগিচায় এলটিইউ’র সম্মেলন কক্ষে প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (করনীতি) মো. আলমগীর হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এলটিইউ এর কমিশনার মো. ইকবাল হোসেন। প্রশিক্ষণে এলটিইউ এর সহকারী ও উপকর কমিশনাররা অংশগ্রহণ করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এলটিইউ এর অতিরিক্ত কমিশনার ও যুগ্ম কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য (গ্রেড-১) আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এলটিইউ একটি ব্র্যান্ড। এলটিইউ নিজস্ব লিডারশীপ আর পারফরমেন্স দিয়ে বর্তমানে ২৭ শতাংশ রেভিনিউ আদায় করছে। এখানে দেশের সবচেয়ে বড় রেভিনিউ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে। এখানে থাকা করদাতারা খুবই সফিস্টিকেটেড ও স্মার্ট। কাজেই এসব করদাতাকে হ্যান্ডেল করতে হলে কর্মকর্তাদেরও স্মার্ট হতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রথমে নলেজের দিক থেকে স্মার্ট হতে হবে। আর নলেজ বাড়াতে হলে টেকনোলজি, মাইনসেট পরিবর্তন করতে হবে। রাজস্ব সুরক্ষা ও রাজস্ব আহরণ নিশ্চিত করার জন্য কর্মকর্তাদের প্রথমে মাইনসেট বিল্ডআপ করতে হবে।’
তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমাকে প্রথমে বুঝতে হবে, এনবিআর আমাকে এলটিইউ এর মতো জায়গায় পোস্টিং দিয়েছে। একজন কর্মকর্তা হিসেবে সেজন্য আমার দায়িত্ববোধ রয়েছে। সেজন্য আমাকে স্মার্ট হতে হবে। স্মার্ট হতে হলে আমাকে জানতে হবে, শিখতে হবে। শিখতে হলে কর্মকর্তাদের সব সময় চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। দক্ষতা উন্নয়নে শেখার আগ্রহ ও কৌতুহল থাকতে হবে। ৭০০ কোটি টাকার রেভিনিউ থেকে এখন তিন লাখ কোটি টাকার রেভিনিউ আহরণ করি। আমরা এখনো একটি বিশ্বমানের একাডেমি করতে পারিনি। এত সীমাবন্ধতার মাঝেও আমাদের সব কর অঞ্চল কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘নিজেদের আরো বেশি দায়িত্ববান হতে হবে। নিতে হবে চ্যালেঞ্জ। আমাদের যে দক্ষতা আর নলেজের ঘাটতি, তা পূরণে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। এই প্রশিক্ষণের বাইরেও নতুন নতুন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ নিতে হবে। নিজের আত্মমর্যাদার জন্য হোক আর ডিপার্টমেন্টের জন্য হোক, চ্যালেঞ্জ নিয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। প্রশিক্ষণ আর জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে যেভাবে ব্র্যান্ডিং করবে, তা শুধু আগামী দিন নয়, অবসরের পরও এই ব্র্যান্ডিং কাজে লাগবে। তাহলে বড় করদাতা, কোম্পানি সব সময় তোমাকে মূল্যায়ন করবে। এর মাধ্যমে তোমরা আয়কর বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করবে। রাষ্ট্র যতটুকু রাজস্ব ডিজার্ভ করে, ঠিক ততটুকু রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।’
কমিশনার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, এই প্রশিক্ষণ কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এবং কর্মকর্তাদের ক্যারিয়ারে অবদান রাখবে। সার্বিকভাবে কর ব্যবস্থায় এবং রাষ্ট্রের কল্যাণে অবদান রাখবে।

এলটিইউ সূত্রমতে, ১৯ অক্টোবর শুরু হওয়া এই প্রশিক্ষণ চলবে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। ১৯ অক্টোবর ‘বৃহৎ কোম্পানিসমূহের আয়কর নির্ধারণী আদেশের গুণগত মান সমৃদ্ধকরণে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা’, ‘আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী অবচয় সংক্রান্ত বিধি বিধান’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ২১ অক্টোবর ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত বিধি বিধান’, ‘ক্যাপিটাল গেইনস অন সিকিউকিরিটিজ’, ২৪ অক্টোবর ‘আয়কর আইন ও বিধি প্রণয়নে অনুসৃত প্রক্রিয়া’, ‘আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী সেট অফ এন্ড ক্যারিয়ার ফরোয়ার্ড অব লস সংক্রান্ত বিধি বিধান’, ২৫ অক্টোবর ‘আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী জরিমানা আরোপ সংক্রান্ত বিধি বিধান’, ‘আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী উৎসে কর কর্তন সংক্রান্ত বিধি বিধান’, ২৬ অক্টোবর ‘জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের নিমিত্ত দিকনির্দেশনা’, ‘আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী অগ্রিম আয়কর ও সরল সুদ সংক্রান্ত বিধি বিধান’, ২৭ অক্টোবর ‘কর নির্ধারণী আদেশ প্রণয়নে লক্ষ্যণীয় বিষয়সমূহ’, ‘আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী ধারা ৮২ সি এর বিধি বিধান’, ২৮ অক্টোবর আয়কর অধ্যাদেশ ধারা ৯৩ এর বিধি বিধান’, ‘আয়কর অধ্যাদেশ এর ধারা ৮২ বিবি ধারায় দাখিল করা আয়কর রিটার্নসমূহের প্রসেসিং এবং ৩০ ধারায় গৃহিতব্য কার্যক্রম পর্যালোচনা’, ৩১ অক্টোবর ‘স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের মূলধনী মুনাফা ও ডিভিডেন্ড আয়ের উপর করদায় নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় বিধি বিধান’, ১ নভেম্বর ‘বিমা কোম্পানিসমূহের আয়কর নির্ধারণে প্রযোজ্য বিধি বিধান’, ‘আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী আপীল/ট্রাইব্যুনাল ও হাইকোর্টে রেফারেন্স সংক্রান্ত বিধি বিধান এবং প্রতিক্রিয়া প্রতিবেদন প্রস্তুতের সময় গৃহিতব্য সর্তকর্তা’, ‘আয়কর অধ্যাদেশ এর ধারা ৮২ বিবি এর বিধি বিধান (রিটার্ন প্রসেসিং ব্যতীত)’ ৩ নভেম্বর ‘উচ্চ আদালতে মামলার বিভিন্ন ধাপে করণীয়’ এবং ‘আয়কর অধ্যাদেশ এর ধারা ১৯ এর বিধি বিধান’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।