শেয়ার বিজ ডেস্ক: শেষ মুহূর্তে ঋণের একটি কিস্তি পরিশোধ করায় পুঁজিবাজারে চাঙা ছিল চীনের আবাসন খাতের শীর্ষ কোম্পানি এভারগ্রান্ডের শেয়ারদর। গতকাল চীনের হংকং স্টক একচেঞ্জে চীনের রিয়েল এস্টেট জায়ান্ট এভারগ্রান্ডের শেয়ারের দামের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। দেনায় জর্জরিত খেলাপি হওয়ার চূড়ান্ত সময়সীমার আগেই একটি ঋণের কিস্তি শোধ করতে সক্ষম হওয়ায় গতকাল স্টক মার্কেটে ছয় শতাংশ বেড়ে যায় এভারগ্রান্ডের শেয়ারের দাম। খবর: বিবিসি।
এর আগে গত মাসে ৮৩ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ডলারের এ কিস্তি পরিশোধের প্রাথমিক সময়সীমা অতিক্রম করে এভারগ্রান্ড। এমনকি শেষ হওয়ার পথে ছিল ঋণ পরিশোধের জন্য বেঁধে দেয়া এক মাসের চূড়ান্ত সময় সীমাও (গ্রেস পিরিয়ড)। শনিবার ছিল ৩০ দিনের গ্রেস পিরিয়ডের শেষদিন। এর মধ্যেই এক দিন আগে গতকাল শুক্রবার প্রতিষ্ঠানটি তাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করায় স্বস্তি ফিরে আসে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
শনিবারের মধ্যে এ কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে আনুষ্ঠানিকভাবে খেলাপির খাতায় নাম উঠে যেত এভারগ্রান্ডের।
এদিকে ঋণের কিস্তি পরিশোধের সক্ষমতা দেখানোয় প্রতিষ্ঠানটির ওপর আস্থা একটু একটু করে ফিরে পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এর প্রমাণ কিস্তি পরিশোধের খবরের পরপরই শেয়ার মার্কেটে তাদের শেয়ারের দামের উন্নতি। অথচ এর আগে কিস্তি পরিশোধে গ্রেস পিরিয়ডের সময়সীমা যতই ঘনিয়ে আসছিল ততই পড়তে শুরু করেছিল তাদের শেয়ারের দাম। সবশেষে গত বৃহস্পতিবারও বড় ধরনের ধস নামে এভারগ্রান্ডের শেয়ারের দামের।
ঋণের দায় থেকে বাঁচার জন্য শেষ চেষ্টা হিসেবে নিজেদের ‘প্রপার্টি সার্ভিস ইউনিট’ এর একটি অংশ বিক্রি করার চেষ্টা করছিল এভারগ্রান্ড কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় এ ধস নেমেছিল তাদের শেয়ারের দামে।
দুই দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলারে নিজেদের এ সার্ভিস ইউনিটের ৫১ শতাংশ মালিকানা বিক্রির ব্যাপারে চীনের অপর একটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান হপসন ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছিল এভারগ্রান্ড।
কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভেস্তে যায় তাদের সমঝোতা। কারণ হিসেবে উভয় প্রতিষ্ঠানই বিক্রির বিভিন্ন শর্তে একমত না হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে।
তবে এভারগ্রান্ডের এ ঋণের কিস্তি পরিশোধ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সাময়িক স্বস্তি ফিরিয়ে আনলেও দীর্ঘমেয়াদে এখনও প্রতিষ্ঠানটি শঙ্কার মধ্যে রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পাশাপাশি একটি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না করতেই আগামী সপ্তাহে ৪৭ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ডলারের আরেকটি কিস্তি পরিশোধের মুখোমুখি হবে এভারগ্রান্ডকে।
বর্তমানে ৩০৫ বিলিয়ন ডলারের বিশাল ঋণের ভারে জর্জরিত চীনের এ রিয়েল এস্টেট জায়ান্ট। কোম্পানিটির মোট দায়দেনা চীনের মোট জিডিপির প্রায় দুই শতাংশের সমান, যা পরিশোধ করা আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভবই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে এভারগ্রান্ডের পতনের আশঙ্কায় ঝুঁকিতে বিশ্ব অর্থনীতিও। ধারণ করা হচ্ছে, এভারগ্রান্ড দেউলিয়া হলে প্রভাব পড়বে বিশ্বের অর্থনীতিতে।
মূলত নিজেদের দেশের ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়-ব্যয়সহ তাদের ঋণের ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য গত বছর নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করে চীন সরকার। এর পরপরই এ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় এভারগ্রান্ড।