বৃষ্টিপাতের কারণে ক্ষতিতে যশোরের শীতকালীন সবজি

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতের কারণে ক্ষতিতে পড়েছে যশোরের শীতকালীন সবজি ও আমন ধান। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে জেলায় মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বেশ কয়েকটি আধা পাকা ধান গাছ মাঠে নুয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও সবজিক্ষেতে পানি জমে রয়েছে। এতে বিস্তীর্ণ মাঠে শীতের আগাম নানা জাতের সবজি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে যশোরের প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের শীতের সবজি চাষ হয়েছে। তবে বৃষ্টিতে কী পরিমাণ সবজি নষ্ট হয়েছে, সে বিষয়ে কৃষি বিভাগ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি।

সবজি চাষের জন্য পরিচিত চূড়ামনকাটি এলাকার কৃষকরা জানিয়েছেন, বৃষ্টির কারণে বেশ কয়েকটি সবজি ক্ষেতে পানি জমেছে। দু-এক দিনের মধ্যে যদি বৃষ্টি না কমে, তাহলে নিশ্চিতভাবে এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। বৃষ্টি চলে গেলে অতীতের মতো দ্বিতীয় দফা সবজি চাষ করতে হবে বলে তারা জানান।

সবজি কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, আব্দুলপুর এলাকায় ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো ও মরিচসহ বিভিন্ন সবজির চারা রোপণ করা হয়েছে। অনেক কৃষক এসব চারা ক্ষেতে পলিথিন দিয়ে বৃষ্টির পানি কিছুটা ঠেকাতে পেরেছেন। আর যারা এ পদ্ধতি অনুসরণ করেননি তারা ব্যাপক ক্ষতিতে পড়েছেন। বৃষ্টির কারণে মুলা, পালংশাক, বেগুন, করোলা ও শিম ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষেতে সবজি গাছের গোড়ায় পচন ধরার আশঙ্কা রয়েছে বলে তিনি জানান।

গত এক সপ্তাহের বৃষ্টিতে সবজি ক্ষেতের পাশাপাশি আমন আবাদও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় এক লাখ ৮০ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমন ক্ষেতের অবস্থা অনেক ভালো। বেশিরভাগ জমির ক্ষেতের ধান এখন পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু এরই মধ্যে এক সপ্তাহ ধরে মাঝেমধ্যে বৃষ্টিপাত, সেইসঙ্গে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ায় কিছু এলাকার মাঠের আধা পাকা আমন ক্ষেতের মাঠিতে নুয়ে পড়ে। এ অবস্থায় আমন আবাদের ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। বেশিরভাগ ক্ষেতে ধানগাছ পড়ে যাওয়ার পাশাপাশি জমিতে পানি জমে গেছে।

বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর গ্রামের কৃষক শামসুর রহমান বলেন, এ বছর আবহাওয়া ভালো হওয়ায় আমনের ভালো ফলন হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেতের ধান প্রায় পেকে উঠেছে। আর ১০ থেকে ১৫ দিন পর কৃষক এসব ধান ঘরে তুলতে পারবেন। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি ও হঠাৎ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। এতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় ক্ষেতের আমন। সর্বশেষ গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে তা আরও হুমকিতে পড়েছে।

তিনি বলেন, শিগগির বৃষ্টিপাত না কমলে নিশ্চিত এ বছর আমনের ফলন কম হবে।

একই কথা বলেন খাজুরার প্রেমচারা এলাকার কৃষক ফজর আলী মোল্লা। তিনি বলেন, এ বছর আগাম জাতের কিছু ধান আবাদ করা হয়েছে। এসব ধান এরই মধ্যে পেকে গেছে। ধান এখন পানির নিচে। বাতাসের কারণে বেশিরবাগ ধান মাটিতে। এ অবস্থায় ধানে চিটে পড়ার শঙ্কায় রয়েছি আমরা।

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বছরে এ মৌসুমে বৃষ্টিপাত হলেও কখনও ঝড়ো বাতাস হতে দেখিনি। কিন্তু সম্প্রতি এ অঞ্চলে বৈশাখের আদলে ঝড় হয়েছে, যা আমন কৃষকদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি করেছে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাদল চন্দ  বিশ্বাস বলেন, বৃষ্টির কারণে কী পরিমাণ সবজি ও ধানের ক্ষতি হয়েছে, তা আপাতত বলা মুশকিল। তবে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, সামনে বৃষ্টিপাত না হলে আমন ও সবজির তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। তবে উৎপাদনে কিছুটা গরমিল হবে, যা কৃষক পুষিয়ে উঠতে পারবেন।

তিনি বলেন, আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি যাতে ক্ষেতে পানি জমে থাকতে না পারে। যেকোনো উপায়ে যেন পানি সরিয়ে ফেলা হয় সে পরামর্শ দিয়েছি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০