প্রথিতযশা আলোকচিত্র শিল্পী, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকালের সফল ক্যামেরা যোদ্ধা রশিদ তালুকদার। ডাক নাম কাঞ্চন। সহকর্মীদের কাছে তিনি ‘রশীদ ভাই’। বাংলাদেশের বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে তার আলোকচিত্র। তার ক্যামেরায় বন্দি হয়েছে ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান থেকে সত্তরের নির্বাচন, অসহযোগ আন্দোলন, যুদ্ধ, গণহত্যা, যুদ্ধের ধ্বংসলীলা, কান্না, নারী আন্দোলনসহ অসংখ্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত। রশীদ তালুকদার ১৯৩৯ সালের ২৪ অক্টোবর চব্বিশ পরগনায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনী থানার দক্ষিণ রমজানপুর গ্রামে। পেশা হিসেবে তিনি ফটো সাংবাদিকতাকে বেছে নেন। ১৯৫৯ সালে তিনি ফটো টেকনিশিয়ান হিসেবে প্রেস ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্টে যোগ দেন। ১৯৬২ সালে ফটোসাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন দৈনিক সংবাদে। ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনে শহীদ আসাদের মৃত্যুর প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন রশীদ তালুকদার। তার ক্যামেরায় স্থিরচিত্র হিসেবে ফুটে ওঠে ছাত্র-জনতার দীর্ঘ মিছিলসহ আসাদের শার্টের ছবি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পূর্ব তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গণ-অভ্যুত্থানের স্থিরচিত্র হিসেবে মিছিলের সম্মুখভাগে পথশিশুর ছবি তুলেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি নানাভাবে সহযোগিতা করেন। এ সময় তার সঙ্গে সবসময় ১৩৫ মি.মি. ক্যামেরা থাকত। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ঢাকার রায়েরবাজার বধ্যভূমি থেকে বুদ্ধিজীবীদের লাশ উত্তোলনের ছবি তিনিই ধারণ করেন। রশীদ তালুকদার ১৯৭৫ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে যোগ দিয়ে ২৯ বছর চাকরি করে ২০০৭ সালে অবসর নেন। আলোক চিত্রকলায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে স্বর্ণপদকসহ ৭৭টি পুরস্কার লাভ করেন। এর মধ্যে ২০০৬ সালে তিনি ‘ছবি মেলা আজীবন সম্মাননা পুরস্কার’, ২০১০ সালে ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি’র পক্ষ থেকে ‘পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড’, জাতিসংঘ কর্তৃক ‘নিরাশ্রয়ের জন্য আশ্রয়’ শীর্ষক প্রতিযোগিতায় একত্রে ছয়টি পুরস্কার এবং জাপান ফটোগ্রাফিক সোসাইটি ও আশাহি শিমবুন পত্রিকার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় পরপর দু’বার পুরস্কৃত অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা