সূচকের বড় উত্থান

পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় বিনিয়োগকারীরা

মো. আসাদুজ্জামান নূর: ধারাবাহিকভাবে সূচক কমছিল দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)। সোমবার একটি বড় ধাক্কা লাগে বাজারে। ১২০ পয়েন্ট হারিয়ে ৩৩ কার্যদিবস পরে সাত হাজারের নিচে চলে যায় সূচক। এতে হতাশায় পড়েন বিনিয়োগকারীরা। এর প্রতিবাদে সেদিন মতিঝিলে ডিএসইর পুরোনো ভবনের সামনে বিনিয়োগকারীদের রাস্তায় নামতে দেখা যায়।

গতকাল আবারও হারানো সূচক যোগ হয়ে সূচকের অবস্থান হয় সাত হাজার পাঁচ পয়েন্ট। এছাড়া লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৭৬টি কোম্পানির মধ্যে ৩৪০টির শেয়ারদর বৃদ্ধি পায়। বাজারের এমন উত্থানে বিনিয়োগকারীদের হতাশা কাটতে শুরু করেছে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা গত কয়েক দিনের ধারাবাহিক পতনকে স্বাভাবিক বাজার সংশোধন বললেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এটাকে দেখছিলেন ধস হিসেবে। তবে এক দিনের ব্যবধানে সাত হাজার পয়েন্ট সূচকের ফেরা ও তিন শতাধিক কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ায় আশার আলো দেখছেন তারা, যদিও টাকার হিসেবে লেনদেন আগের দিনেরও চেয়ে আরও কমেছে।

অন্যদিকে ভীত হয়ে শেয়ার বিক্রি না করে ধরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে সেল প্রেশার না বাড়িয়ে শেয়ার ধরে রাখলে মুনাফা পাওয়া সম্ভব।

এদিকে বাজার পতনের মধ্যেও ধারাবাহিকভাবে লেনদেনের শীর্ষে কয়েকটি খাতের আধিপত্য লক্ষ করা যাচ্ছে। এর মধ্যে ওষুধ ও রসায়ন, ব্যাংক, বস্ত্র, বিবিধ, প্রকৌশল, জীবন বিমা, বিমা প্রভৃতি খাতে লেনদেন ভালো হচ্ছে। এছাড়া গতকাল এসব খাতের সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে দেখা গেছে। এসব দিক বিবেচনায় এনে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠছেন বিনিয়োগকারীরা। মাসুম জামান নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, গত কয়েক দিনের পতনের কারণে অনেকে ২০১০ সালের মতো ধসের আশঙ্কায় শেয়ার বিক্রি করেছেন। এছাড়া কোম্পানি ডিভিডেন্ড ঘোষণার কারণেও বাজার পতন হয়। এই মুহূর্তে সেটাই হচ্ছে বলে মনে করছি।

তিনি আরও বলেন, বাজারে চলমান পতনকে বিশেষজ্ঞরা ‘মার্কেট কারেকশন’ বলছেন। যদি তা-ই হয় তাহলেও আমরা ধরে নিচ্ছি খুব দ্রুতই বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। আজকের (গতকাল) মার্কেট দেখে কিছুটা আশাবাদী হচ্ছি।

আরেক বিনিয়োগকারী এসএম পারভেজ বলেন, আমরা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিশেষজ্ঞদের মতামত পড়ছি। বেশ কিছুদিন থেকে আমরা যে পতন দেখছি, সেটাকে তারা বাজার সংশোধন বলছেন। যদি তাই হয় তাহলে দ্রুতই বাজার চাঙা হবে বলে আমরা আশা করছি। আর যদি না হয় তাহলে বুঝতে হবে এখানে অন্য খেলা চলছে। এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, চলমান পতন বাজারের একটি ‘নরমাল কারেকশন’। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান শেয়ার ছাড়ায় সেল প্রেশার বেড়ে যাচ্ছে, ফলে বাজার পতন হচ্ছে।

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কথিত বিনিয়োগকারী না হয়ে বাজার সম্পর্কে ভালো করে জেনে বিনিয়োগ করা উচিত। দীর্ঘ মেয়াদের বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের দেশে পাঁচ শতাংশ বুঝে বিনিয়োগ করে, আর বাকি ৯৫ শতাংশ ২-৫ দিনের ইনভেস্টর। এ কারণেই মার্কেট এমন বিহেভ করে। বাজার সংশোধনে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে গতকাল ডিএসইতে ৩৭৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪০টি কোম্পানির শেয়ারদরই বৃদ্ধি পেয়েছে। দর কমেছে মাত্র ২২টি কোম্পানির শেয়ারের। বাকি ১৪টি কোম্পানির শেয়ারদর অপরিবর্তিত ছিল। দরবৃদ্ধি পাওয়া ৩৪০টি কোম্পানির মধ্যে ৪৭টি কোম্পানির শেয়ারের দাম যতটুকু বাড়া সম্ভব ততটুকু বেড়েছে। ফলে এই বিষয়টিই আশাবাদী করছে বিনিয়োগকারীদের।

গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১২০ পয়েন্ট বেড়েছে, যার ফলে আবার সূচকটি সাত হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। বর্তমানে এটি অবস্থান করছে সাত হাজার পাঁচ পয়েন্টে। আগের দিন সূচকের ১২০ পয়েন্ট পতনের কারণে ডিএসইএক্স সাত হাজার থেকে কমে ছয় হাজার ৮৮৫ পয়েন্টে নেমেছিল। তবে মাত্র এক দিনেই প্রধান সূচক আবারও আগের অবস্থানে ফিরেছে। অপর দুই সূচকও আগের কর্মদিবসের তুলনায় বেড়েছে। শরিয়াহ্ সূচক ডিএসইএস এবং ডিএসই৩০ যথাক্রমে ১৬ ও ১৭ পয়েন্ট বেড়েছে।

সব সূচকের উত্থান হলেও টাকার অঙ্কে কমেছে লেনদেন। গতকাল ডিএসইতে টাকার অঙ্কে এক হাজার ৩৮৬ কোটি ৯১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৪৭০ কোটি ৪৩ লাখ টাকার। ফলে এক দিনে লেনদেন কমেছে ৮৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

গতকাল লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কেডিএস এক্সেসরিজের শেয়ারদর। আগের দিন কোম্পানিটির ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণার খবরে গতকাল এর শেয়ারদর বেড়েছে ছয় টাকা ৬০ পয়সা বা ১০ দশমিক ১৯ শতাংশ। এছাড়া অ্যাকটিভ ফাইন, ডমিনেজ স্টিল, নূরাণী ডাইয়িং, অলিম্পিক এক্সেসরিজ ও ইয়াকিন পলিমারের শেয়ারদরও এদিন ১০ শতাংশ করে বেড়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০