পরিবেশের বিপর্যয় রোধে চাই জনসচেতনতা

পরিবেশই প্রাণের ধারক, জীবনীশক্তির বাহক। সৃষ্টির শুরু থেকেই পরিবেশের সঙ্গে প্রাণীর মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতার ওপরেই তার অস্তিত্ব নির্ভর করে আসছে। পরিবেশ প্রতিকূল হলে জীবের ধ্বংস ও বিনাশ অবশ্যম্ভাবী। পরিবেশের ওপর নির্ভর করে মানুষ, অন্যান্য উদ্ভিদ ও প্রাণী-জীবনের বিকাশ ঘটে। তাই পরিবেশ ও মানুষের মধ্যে রয়েছে এক নিবিড় যোগসূত্র।

সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং তাদের পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে উৎসাহ দেয়ার সময় এখনই। প্রকৃতি না বাঁচলে মানবজাতিই যে বিপন্ন হবে, সেই নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোই মূলত উদ্দেশ্য। বর্তমান অন্ধকারময় পরিস্থিতিতে অতীতকে ফেরানো সম্ভব নয় ঠিকই। কিন্তু আমরা গাছ লাগাতে পারি, আমাদের আশপাশের শহরকে আরও সবুজ করতে পারি, বাড়ির বাগান পুনর্নির্মাণ করতে পারি, নিজেদের ডায়েট পরিবর্তন করতে পারি এবং নদী ও উপকূল পরিষ্কার রাখতে পারি। আমরা এমন একটি প্রজন্ম যারা এসবের মাধ্যমে প্রকৃতির শান্তি বজায় রাখতে পারি।

বর্তমান বিশ্বে পরিবেশগত সমস্যা একটি মারাত্মক সমস্যা। একটু লক্ষ্য করলেই আমরা দেখতে পাই, নিজেদের অবহেলার কারণেই প্রতিদিন আমরা চারপাশে তৈরি করছি বিষাক্ত পরিমণ্ডল এবং নিজেদের ও ভবিষ্যৎ প্রজš§কে ঠেলে দিচ্ছি এক নিঃশব্দ বিষক্রিয়ার মধ্যে।

অনেকভাবেই পরিবেশের ক্ষতি হয়। সেগুলোর উল্লেখযোগ্য পলিথিন, বন উজাড়, পানিতে আর্সেনিক, রাসায়নিক ও কীটনাশকের ব্যবহার ও জনগণের অসেচতনতা প্রভৃতি।

পলিথিন : দেশে পলিথিন নিষিদ্ধ থাকলেও তা রূপ পরিবর্তন করে বিভিন্নভাবে ব্যবহƒত হচ্ছে। পলিথিন এক অবিনাশী বর্জ্য, যেখানেই ফেলা হোক না কেন এর শেষ নেই। পোড়ালে এই পলিথিন থেকে যে ধোঁয়া বের হয় তা-ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তবে ২০০২ সালের ১ মার্চ সরকার সারাদেশে পলিথিনের শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছে। বন উজাড় : যে কোনো দেশের পরিবেশে বনভূমি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বনভূমির ওপর দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য বহুলাংশে নির্ভরশীল। কোনো দেশে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য দেশের বনভূমির পরিমাণ ১০ শতাংশেরও কম। সরকারি হিসাবে বনভূমির পরিমাণ ১৭.৫ শতাংশ। বনভূমি উজাড় আমাদের দেশের পরিবেশগত সমস্যার অন্যতম কারণ।

. পানিতে আর্সেনিক : দেশের অনেক অঞ্চলে খাবার পানিতে আর্সেনিকের মতো মারাত্মক রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তথ্যটি যে কোনো নাগরিকের জন্য উদ্বেগজনক বিষয়। কারণ আর্সেনিক সরাসরি পাকস্থলীতে গেলে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু ঘটতে পারে।

. শব্দদূষণ : শব্দদূষণ বর্তমান সময়ে এক মারাত্মক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমরা এখন বাস করছি হাইড্রোলিক হর্ন নামে এক ভয়ংকর শত্রুর সঙ্গে, যার উৎকট আওয়াজ প্রতিদিন একটু একটু করে চাপ বাড়াচ্ছে আমাদের কানের পর্দার ওপর এবং ক্ষয় করে দিচ্ছে আমাদের শ্রবণ ক্ষমতাকে। এছাড়া আমাদের শ্রবণযন্ত্রের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য রয়েছে মাইকের আওয়াজ ও কলকারখানার শব্দ। এর ফলে আরও ভয়াবহ শারীরিক ও মানসিক ব্যাধিরও সৃষ্টি হচ্ছে। এ শব্দদূষণ আমাদের পরিবেশগত বিপর্যয়কে আরও ঘনীভূত করছে।

. রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার: ভালো ও উন্নত জাতের ফসল ফলানোর জন্য এবং কীটপতঙ্গের হাত থেকে ফসলকে রক্ষার জন্য কৃষকরা অপরিকল্পিতভাবে এবং কীটপতঙ্গের হাত থেকে ফসলকে রক্ষার জন্য ব্যবহার করছে। এগুলো অতিমাত্রায় ব্যবহারের দরুন জীবজগৎ, প্রাণিজগৎ এবং পরিবেশ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।

পরিবেশ বিপর্যয়ের মতো নিঃশব্দ শত্রুর হাত থেকে দেশকে ও বিশ্বকে রক্ষা করতে হলে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।

লুৎফর রহমান লাভলু

শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ

ঢাকা কলেজ, ঢাকা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০