শেয়ার বিজ ডেস্ক: কভিড-১৯-এর প্রভাবে দেড় বছরের বেশি সময় বন্ধ ছিল জাপানের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের পর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আবার চালু করলেও বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি প্রতিষ্ঠানগুলো। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। ঋণে জর্জরিত হয়ে এসব প্রতিষ্ঠান এখন দেউলিয়া হওয়ার পথে। বিশাল ঋণের বোঝা পরিশোধের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল ব্যবসা থেকে বার্ষিক ঋণের পরিমাণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, এ সংকট ২০০৮ সালের বিশ্বমন্দাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে, যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি কোম্পানিগুলোকে গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণের বোঝার দিকে ঠেলে দিয়েছে। খবর: নিক্কেই এশিয়া।
জাপানের রাজধানী টোকিও’র কান্দা স্টেশনের কাছে একটি গ্রিলড চিকেন রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমি মনে করি না যে, কভিড সংক্রমণ আবার বাড়বে, যাতে আমার ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতি হলে আমি আসন্ন শীত মৌসুমে কীভাবে বাঁচব?
তিনি বলেন, মাত্র ২০ জনের বসার ব্যবস্থা থাকা রেস্টুরেন্টকে মাসে ভাড়া ও কর্মচারীর বেতন বাবদ তিন মিলিয়ন ইয়েন (২৬ হাজার ডলার) ব্যয় করতে হচ্ছে। এছাড়া ঋণের অর্থ জমা রাখতে হয়, যা আমাদের সাধ্যের একেবারে বাইরে। তিনি আরও বলেন, সেপ্টেম্বরে জরুরি অবস্থা শেষে রেস্টুরেন্ট চালু করার পর গ্রাহক আসতে শুরু করেছে। এখন সংক্রমণ বাড়লে ফের বন্ধ রাখতে হবে, যার জন্য আমরা মোটেও প্রস্তুত নই।
জাপানের কোম্পানিগুলো কভিডকালে বেশি ঋণ করেছে, যদিও আয় সবেমাত্র শুরু হয়েছে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, চলতি বছরের মার্চ শেষে কোম্পানিগুলোর কর, সুদ ও অন্যান্য খরচসহ ঋণের বোঝা চার দশমিক ৯ গুণে দাঁড়িয়েছিল। এর আগে ২০০৮ সালের বিশ্বমন্দার প্রভাবে ২০০৯ সালের মার্চ শেষে ঋণের পরিমাণ ছিল পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ। ঋণের এ চিত্রটি কোম্পানিগুলোকে দেউলিয়ার পথে এগিয়ে দিচ্ছে।
তথ্যমতে, ঋণের এ বোঝা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পাশাপাশি বড় শিল্পেও প্রভাব ফেলেছে। ১০০ মিলিয়ন বা তার বেশি ইয়েনের মূলধনি বড় কোম্পানিগুলোর ঋণ দাঁড়িয়েছে চার দশমিক সাতগুণ। আর রেস্তোরাঁ কিংবা ১০ মিলিয়ন ইয়েন মূলধনি ছোট কোম্পানির ক্ষেত্রে এ ঋণের পরিমাণ ১৪ গুণ বেশি।
টোকিও শকো রিচার্চের মতে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) ২৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া ঘোষণা করেছে, যার সংখ্যা দুই হাজার ৯৩৭টি। যদিও উচ্চ বেকারত্বের কারণে ২০০৯ সালে ১৫ হাজারের বেশি কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল।
যদিও জাপানের স্থানীয় সরকার খারাপ লোনের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্যারান্টি দেয়। শেষ পর্যন্ত ঋণের বোঝাটি করদাতারে ওপর চলে যায়। কারণ দেউলিয়া প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই জাপান ফাইন্যান্স করপোরেশনের (জেএফসি) ইন্স্যুরেন্স করা। ২০২০ সালের অর্থবছরে জেবিসির দায় ৩৩ ট্রিলিয়ন ইয়েন ছাড়িয়ে গেছে, যেখানে চলতি বছরের মার্চ শেষে জেবিসি এক দশমিক শূন্য তিন ট্রিলিয়ন ইয়েন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের ধারণা, কভিড মহামারির ফলে দেউলিয়া প্রতিষ্ঠান আরও বেশি বৃদ্ধি পেলে জেএফসির ক্ষতি আরও বেড়ে যাবে। তবে সরকারের কর থেকে জেএফসিকে এক দশমিক পাঁচ ট্রিলিয়ন ইয়েন দেয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা করা উচিত। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতকে সহযোগিতার জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে ঋণ পরিশোধের জন্য নতুন করে সময়সীমা বাড়িয়ে দিতে হবে।