যানবাহন নিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে দুর্ঘটনার কবলে শাহ আমানত

নিজস্ব প্রতিবেদক: মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় ৫ নম্বর ফেরিঘাটে বেশ কয়েকটি যানবাহনসহ পদ্মায় হেলে পড়েছে শাহ আমানত নামের একটি ফেরি। রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে যানবাহন নিয়ে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় নদী পার হয়ে পাটুরিয়ায় পৌঁছানোর পরপরই ফেরিটি দুর্ঘটনায় পড়ে বলে বিআইডব্লিউটিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম মিশা জানান।  তিনি বলেন, ওই ফেরিতে ১৭টি পণ্যবাহী ট্রাক ছিল বলে প্রাথমিকভাবে তারা জানতে পেরেছেন। দুটি ট্রাক ও যাত্রীরা নামার পর ফেরিটি কাত হয়ে ডুবে যায়। ঘাটের পাশে নদীতে কাত হয়ে অর্ধেক ডুবে আছে ফেরি শাহ আমানত। পাম্প দিয়ে পানি সরানো হচ্ছে। উদ্ধার কাজ চলছে।

ফেরি উল্টে যাওয়ার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। তাদের ডুবুরি দল সেখানে তল্লাশি চালাচ্ছে বলে ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা রাফি আল ফারুক জানিয়েছেন। কীভাবে ফেরিটি ডুবে গেল, সে বিষয়ে কোনো তথ্য তিনি দিতে পারেননি। তবে অমল ভট্টাচার্য নামে ওই ফেরির এক যাত্রী বলেন, ঘাটের কাছাকাছি পৌঁছানোর পরপর ফেরিতে পানি উঠতে শুরু করে। ঘাটে ভেড়ার পর ফেরি কাত হয়ে ডুবতে শুরু করে।

পাটুরিয়া নৌ-থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, হতাহতের কোনো খবর তারা এখন পর্যন্ত পাননি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, তিনটি ট্রাক ডুবে গেছে। ট্রাক ছাড়াও ফেরিতে কয়েকটি মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার ছিল। কতজন লোক ছিল সেটা এখনও নিশ্চিত নয়।

রাজবাড়ীর সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী ঢাকা যাওয়ার পথে ফেরি দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পাটুরিয়া ঘাটে চলে আসেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এটা আজকে ঘাটে ঘটেছে, যদি মধ্য নদীতে হতো কী পরিণাম হতো? দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মানিকগঞ্জের ডিসি মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ এবং পুলিশ সুপার মো. গোলাম আজাদ খান, শিবালয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন সুলতানা পাটুরিয়া ঘাটে ছুটে যান। ইউএনও জেসমিন বলেন, দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটে আসার পর ওই ফেরি থেকে ‘চার-পাঁচটি গাড়ি’ নামার সুযোগ পেয়েছিল। তারপর হুট করে ফেরিটি উল্টে গেছে। আমরা জানতে পেরেছি, মোট ১৭টি ট্রাক ছিল, আর বেশ কয়েকজন যাত্রী ছিলেন। যখন ফেরি কাত হয়ে গেছে, বেশিরভাগ যাত্রী তখন নেমে গেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি হবে বলে জানিয়ে ডিসি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে কেন এটা ঘটেছে। আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে ভেতরে যদি কোনো লোক থাকে, তাদের উদ্ধার করা। আমরা সেই কাজটি করছি। পদ্মায় কাত হয়ে উল্টে যাওয়া ফেরি উদ্ধারে পাটুরিয়া ঘাটে কাজ শুরু করেছে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা। রো রো ফেরি শাহ আমানতকে বাঁধা হয়েছে হয়েছে হামজার সঙ্গে। তবে কাত হয়ে ফেরিটির মাঝে পানি ঢুকে ওজন বেড়ে যাওয়ায় উদ্ধার কাজে জটিলতার আভাস মিলছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা এরই মধ্যে ডুবে যাওয়া দুটি ট্রাক টেনে তুলেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. নুরুল আলম। ফেরিটির ভেতরে পানি ঢুকে এটির ওজন হাজার টনের বেশি দাঁড়িয়েছে বলে ধারণা করা যায়। কিন্তু হামজার সক্ষমতা মাত্র ৬০ টন। হামজাকে দিয়ে কীভাবে ফেরিটিকে উদ্ধার করা যাবে, সে বিষয়ে কর্মকর্তারা আলোচনা করছেন, যোগ করেন তিনি।

গতকাল সকালের দুর্ঘটনার পর মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে যথারীতি ডাক পড়ে বিআইডব্লিউটিএর জাহাজ হামজার। ফেরি দুর্ঘটনার পর আশপাশের সংস্থাগুলোর উদ্ধার সরঞ্জাম দিয়ে এবারও কাজ হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবার নৌ-দুর্ঘটনার পর যে চিত্র দেখা যায়, এবারও এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে থাকা উদ্ধারকারী সরঞ্জামগুলো কাজ করেনি। নৌ-দুর্ঘটনার পর ঘটনার শিকার জাহাজ উদ্ধারে বেশিরভাগ সময় দায়িত্ব পড়ে বিআইডব্লিউটিএর ওপর। কিন্তু সংস্থাটির উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম ও হামজার ধারণক্ষমতা খুবই কম। এবারও দ্রুতই ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করেছে হামজা। ঘটনাস্থলে এসে বিআইডব্লিউটিএর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. নুরুল আলম বলেন, দুর্ঘটনার পরপর আরিচা ঘাট থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজাকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। বিকাল ৪টা পর্যন্ত হামজা দুটি ট্রাক টেনে তুলতে সক্ষম হয়। কিন্তু মূল সমস্যাটা হচ্ছে ফেরিটিকে উদ্ধার করা।

ডুবে থাকা ট্রাকগুলোকে শনাক্ত করা গেছে বলে উল্লেখ করে তিনি জানান, ট্রাকগুলোয় দড়ি বাঁধার কাজ চলছে। এর মধ্যে দুটি ট্রাক টেনে তোলা হয়েছে হামজাকে দিয়ে। উদ্ধার অভিযান দীর্ঘতর হতে পারে বলে আভাস দেন তিনি।

তবে এখন পর্যন্ত হতাহত বা নিখোঁজের কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ নিখোঁজ আছেন বলে জানা যায়নি। ফেরির ভেতরে থাকা যানবাহনগুলোয় তল্লাশি এখনও চলছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০