নির্বাচন নিয়ে চিন্তাই করছি না: ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক: এবার আমরা নির্বাচন নিয়ে কোনো চিন্তাই করছি না। আগে এ সরকারকে যেতে হবে। তারা পদত্যাগ করে চলে যাওয়ার পর নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে নির্বাচন দিতে হবে, এটাই ফাইনাল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ২০১৮ সালে আপনারা দেখেছেন যে নির্বাচনের ৭-৮ দিন আগে থেকে তারা এমনভাবে মিথ্যা, সাজানো, গায়েবি মামলা দেয়া শুরু করল, প্রার্থীসহ কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হলো। সব নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে মাঠ খালি করে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরা হলো। আর এবার তারা আগে থেকেই বিরোধী নেতাকর্মীদের নামে করা মামলাগুলো অতিদ্রুত শেষ করতে চায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তালিকা করেছে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে এবং নেতারা যেন নির্বাচন করতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সহিংস ঘটনা ঘটেছে, অনেক পূজামণ্ডপ ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশের গুলিতে কয়েক জন মারা গেছে। এসব ঘটনার মাধ্যমে সরকার বিরোধীদলকে ঘায়েল করে বেআইনি ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে চায়। বিএনপিকে নির্মূল করতে চায়।

তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন কোনো ঘটনা ঘটলেই সত্য-মিথ্যা সাজিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে দেয়া হয়। এবারও দেখলাম গ্রেপ্তার বাণিজ্য করার জন্য প্রকৃত অপরাধীরা যেন ধরা না পড়ে সে জন্য অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে মামলা দেয়া হলো।

প্রত্যেকটি ঘটনায় সরকারি দলের ইন্ধন রয়েছেÑদাবি করে তিনি বলেন, রংপুরে দেখা গেল রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতারা এ ঘটনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। পরে বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে মামলা দেয়া হয়েছে। চার মামলায় ৪১ জনকে আসামি করা হয়েছে। কুমিল্লায় পাগল ইকবাল বলে একজনকে সাজিয়েছে। বলা হচ্ছে, সে নাকি কোরআন শরিফ নিয়ে মণ্ডপে রেখেছে। যেগুলো কোনোমতে বিশ্বাসযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, আমি প্রথম দিন থেকে বলেছি সরকারের এজেন্সিগুলো দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটা করেছে। মূল উদ্দেশ্যে হলো জনগণের ভাতের সংকট, ভোটের সংকট, বাক-স্বাধীনতার সংকট, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধির সংকট, এসব থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর জন্য এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

চৌমুহনীতে ২৩টি মামলায় ৭ হাজার ৯৬১ জনকে আসামি করা হয়েছেÑজানিয়ে তিনি বলেন, এ মামলা শেষ হবে কবে? এগুলো তো শেষ হবে না। উদ্দেশ্য হলো, এসব মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে তাদের হয়রানি করা এবং একটা বড় গ্রেপ্তার বাণিজ্য করা।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, পূজামণ্ডপ ভাঙচুরের ঘটনায় মোট ৬০টি মামলায় ১৫ হাজার ৯৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় ইতোমধ্যে বিএনপির ১৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আপনারা জেনে গেছেন যে, এসব ঘটনার পেছনে সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ আছে। তারা নিজেদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জাতির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করছে। আমাদের মধ্যে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আছে সেটা বিনষ্ট করছে সরকার।

তিনি বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই বরকত উল্লাহ বুলুসহ বিএনপির যেসব নেতাকর্মীর নামে এসব মামলা দেয়া হয়েছে, এসব ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা নেই। এই মামলাগুলো দিয়েছে শুধু তাদের হয়রানি করা ও রাজনীতি থেকে দূরে সরানোর জন্য। আগামী নির্বাচনের আগেই যেন মামলা-সাজা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঠ থেকে একদম সরিয়ে দেয়া যায়, সে জন্যই এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।

সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের ছেড়ে দিতে হবে এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যারা দায়ী তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। বিএনপি সব সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করে।

চট্টগ্রামে ফ্লাইওভারের পিলারে ফাটল ও পাটুরিয়ায় ফেরি ডুবে যাওয়ার ঘটনায় সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও নজরদারির অভাবে এসব ঘটনা ঘটছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেনÑস্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু প্রমুখ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০