অতিমারি কভিডকালে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়নি। বিভিন্ন শ্রেণিতে সেশনজটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মান প্রথম বর্ষ ভর্তি কার্যক্রমও পিছিয়ে পড়েছে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে সাধারণ, বিজ্ঞান ও কারিগরি সরকারি ২০ বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সাধারণ, বিজ্ঞান ও কারিগরি এই গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ধরনের সংক্ষিপ্ত রূপ জিএসটি (জেনারেল, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি)।
জিএসটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় একপ্রকার হাঁপ ছেড়ে বাঁচে শিক্ষার্থীরা। ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছোটাছুটি করতে হবে না। সুবিধামতো নিকটবর্তী কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করলে ইচ্ছেমতো গুচ্ছভুক্ত যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে।
গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘ভুলে ভরা গুচ্ছের ফল: শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ’ শীর্ষক প্রতিবেদন পাঠকের মনোযোগ কাড়বে বলেই ধারণা। খবরে জানা গেছে, প্রথমবারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতিতে ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার ‘বি’ ইউনিটের (মানবিক বিভাগ) ফল ঘোষণা করা হয়েছে রবিবার। তবে ফল প্রকাশের পরই শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছে, তাদের ভরাটকৃত উত্তরপ্রশ্নের সঙ্গে ফলাফলের মিল নেই। আবার প্রশ্ন ভরাটের চেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছেন বলেও অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। কর্তৃপক্ষ বলছে, ফলাফল নিয়ে কারও সন্দেহ থাকলে তা চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ থাকছে।
উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষার সুযোগ থাকলেই ভর্তি পরীক্ষায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায় না। যখন পুরো পরীক্ষা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে, সেখানে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাজার টাকা ফি নিয়ে ‘পুনঃনিরীক্ষণ’ মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের সমতুল্য। ‘বি’ ইউনিটের সব উত্তরপত্রই ‘পুনঃনিরীক্ষণ’ প্রয়োজন।
শিক্ষার্থীদের যথাযথ ফল প্রকাশের ব্যবস্থা নিতে হবে। যে যত স্কোর পাওয়ার যোগ্য, তাকে সেই স্কোরই দিতে হবে। ইচ্ছাকৃত ভুলকে কারিগরি ভুল হিসেবে যেন চালিয়ে দেয়া না হয়। কয়টি কারিগরি ভুল হতে পারে? ধারণা করছি, গুচ্ছ কমিটি পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়নি, সময় থাকা সত্ত্বেও। যদি যথাযথ ফল দিতে ব্যর্থ হলে পরীক্ষা বাতিল করে আবার পরীক্ষা নিতে হবে। শিক্ষার্থীরা প্রাপ্য স্কোর চায়। পরীক্ষা না দিয়ে কেউ প্রথম হতে চায় না, ভর্তি হতে চায় না। বলা হচ্ছে, অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) শিটে শিক্ষার্থীরা ভুল করছে, তাই তাদের ফলাফলে ভুল আসছে। কিন্তু ওএমআর শিটে শিক্ষার্থীরা এই প্রথম পরীক্ষা দিচ্ছে না।
শুধু ফল তেলেসমাতি নয়, এর আগে রবিবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে ‘বি’ ইউনিটে ভর্তিচ্ছু ছাত্রীর প্রবেশপত্রের তথ্যে গরমিল পাওয়া গেছে। ওই ছাত্রীর প্রবেশপত্রে কেন্দ্রের নাম মুদ্রিত ছিল ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা’। কুবির ‘নিউ একাডেমিক বিল্ডিংয়ের সপ্তম তলায় ওই ভর্তিচ্ছু ছাত্রীর আসন পড়েছে বলে প্রবেশপত্রে উল্লেখ করা হয়। অথচ কুবিতে সাত তলাবিশিষ্ট কোনো একাডেমিক ভবনই নেই। প্রবেশপত্রে ছাপা কিউআর কোড স্ক্যান করলে ‘অনিক আখন্দ’ নামের পরীক্ষার্থীর নাম ও রোল নম্বর আসে, যার কেন্দ্র জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এছাড়া প্রবেশপত্রের রোল অনুযায়ীও অনিক আখন্দের নাম আসে।
প্রবেশপত্রে এমন ভুল থাকার কারণে বলা যায়, উত্তরপত্র মূল্যায়নেও ভুল হতে পারে। সীমাবদ্ধতা ও ভুল স্বীকার করে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা। কোনো খামখেয়ালি ও অবহেলায় যেন শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা লাভের স্বপ্ন যেন ধ্বংস না হয়।