স্মরণীয়-বরণীয়

বাংলাদেশের একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান। মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ১৯৪১ সালের ২৯ অক্টোবর ঢাকায় জন্ম গ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস নরসিংদী জেলার রামনগর গ্রামে, যা এখন মতিনগর নামে পরিচিত। মতিউর রহমান ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পাস করার পর সারগোদায় পাকিস্তান বিমানবাহিনী পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। মেট্রিক পরীক্ষায় তিনি ডিস্টিংকশনসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬১ সালে তিনি বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৭১ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে তিনি সপরিবারে ঢাকায় আসেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হয়েও ভৈরবে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প খুলে বাঙালি যুবকদের যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করেন। ৯ মে সপরিবারে কর্মস্থলে ফিরে গিয়ে জঙ্গিবিমান দখল করে সেটি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ২০ আগস্ট রাশেদ মিনহাজ নামে এক শিক্ষানবিস পাইলট বিমান নিয়ে রানওয়েতে উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিলে মতিউর রহমান সেফটি অফিসারের ক্ষমতাবলে বিমানের ককপিটে চড়ে বসেন এবং তাকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অচেতন করে ফেলেন। জ্ঞান হারানোর আগে রাশেদ মিনহাজ কন্ট্রোল রুমে জানাতে সক্ষম হন, তাকে ও বিমানটিকে হাইজ্যাক করা হয়েছে। কন্ট্রোল টাওয়ার মিনহাজের বার্তা শুনতে পায় এবং রাডারে বিমানের অবস্থান বুঝে অন্য চারটি জঙ্গিবিমান মতিউরের বিমানকে ধাওয়া করে। প্রায় ভারত সীমান্তে পৌঁছে যাওয়া অবস্থায় রাশেদ মিনহাজ জ্ঞান ফিরে পান এবং বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে রাশেদ ইজেক্ট সুইচ চাপলে মতিউর রহমান বিমান থেকে ছিটকে পড়ে নিহত হন। ২০০৬ সালের ২৩ জুন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরের দেহাবশেষ পাকিস্তান থেকে এনে দেশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পুনঃসমাহিত করা হয়। ২০০২ সালে মতিউর রহমানকে নিয়ে অগ্নিবলাকা নামের একটি ডকুড্রামা নির্মাণ করা হয়। এছাড়া তার জীবনী নিয়ে ২০০৭ সালে ‘অস্তিত্বে আমার দেশ’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০