শেয়ার বিজ ডেস্ক: শেষ হলো দুদিনের শিল্পোন্নত ২০টি দেশের জোট জি-২০-এর শীর্ষ সম্মেলন। স্থানীয় সময় গতকাল ইতালির রোমে সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। সম্মেলনে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ন্যূনতম ১৫ শতাংশ বৈশ্বিক করপোরেট করের ঐতিহাসিক চুক্তি অনুমোদন করেছেন বিশ্বনেতারা। ফলে এখন থেকে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে ব্যবসা করতে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে। সম্মেলনের প্রথম দিন শনিবার ২০ অর্থনীতির দেশের নেতারা এ চুক্তিতে সম্মতি দেন। পাশাপাশি তারা গরিব দেশগুলোর জন্য কভিডের আরও টিকার ব্যবস্থা করতে রাজি হয়েছেন। ২০২২ সালের মধ্যেই বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনার বিষয়ে তারা প্রতিশ্রুতি দেন। খবর: রয়টার্স, এএফপি।
ইতালির প্রেসিডেন্ট মারিও দ্রাগির সভাপতিত্বে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে কভিড-১৯ নিয়ে উদ্বেগের কারণে চীন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সম্মেলনে আসেননি। তারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এতে অংশ নেন।
এদিকে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল জি-২০ নেতারা জলবায়ু চুক্তির চূড়ান্ত রূপরেখায় পৌঁছেছেন বলে জানা গেছে। কার্বন নির্গমন দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার চূড়ান্ত লক্ষ্য নিয়ে শীর্ষ নেতারা রুম সম্মেলন শেষ করেন। তবে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত ‘কপ-২৬’ সম্মেলনে তারা চূড়ান্ত ঐকমত্যে পৌঁছাবেন বলে জানা গেছে।
রোমে সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে নেতারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দীর্ঘ আলোচনা করেন, যার সমাপ্তি হবে গ্লাসবে সম্মেলনে।
করপোরেট করের বিষয়টি ছাড়াও এ সম্মেলনে প্রথম দিনের অধিকাংশ সময়জুড়ে থাকে কভিড-১৯ স্বাস্থ্য সংকট। অর্থনীতি পুনরুদ্ধার নিয়ে আলোচনাও গুরুত্ব পায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রোমে প্রথম দিনের বৈঠকেই করপোরেট কর নিয়ে চলে আসা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বৈশ্বিক চুক্তিকে অনুমোদন দেন জি-২০ দেশের নেতারা। এর আগে গত ৮ অক্টোবর বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে একটি ন্যায্য করহারের আওতায় আনতে এবং তাদের কর ফাঁকির পথ বন্ধ করতে ঐতিহাসিক চুক্তিতে পৌঁছায় অধিকাংশ দেশ, যা ২০২৩ সাল থেকে কার্যকর হবে।
তখন ১৩৬টি দেশ ঘোষণা দেয়, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অন্তত ১৫ শতাংশ হারে করপোরেট কর আদায় করবে তারা। পাশাপাশি যে লাভ তারা করবে, সেটির একটি ন্যায্য অংশ যেন তারা কর হিসেবে দেয়, সেটাও নিশ্চিত করা হবে।
এ বিষয়ে টুইটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, এটি একটি কর চুক্তির চেয়েও বেশি কিছু। এটি বৈশ্বিক অর্থনীতিকে একটি আকার দেবে এবং মানুষের জন্য অবদান রাখবে।
বৈশ্বিক কর আরোপের এ আলোচনার নেতৃত্বে থাকা প্যারিসভিত্তিক অরগানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) বলছে, বিশ্ব অর্থনীতির ৯০ শতাংশ এ চুক্তির আওতায় আসবে।
প্রযুক্তি জায়ান্ট ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আরও বেশি কর আদায়ের এ মাইলফলক চুক্তির বিষয়ে দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক আলোচনার পর চলতি বছরের ৬ জুন সমঝোতায় পৌঁছায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ জি৭ জোটের দেশগুলো।
ওইসিডি জানিয়েছে, এ চুক্তির ফলে যদি ন্যূনতম করও আরোপ করা হয়, তাহলে বছরে অন্তত ১৫০ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব বাড়বে। পাশাপাশি কোম্পানিগুলো যেসব দেশে ব্যবসা করে, সেসব দেশে ১২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি মুনাফা স্থানান্তর হবে এবং সেই লাভের ওপর আরও কর আরোপের অধিকার তৈরি হবে।
দরিদ্র দেশগুলোকে ২০ কোটি টিকা দেবে কানাডা: এদিকে বিশ্বজুড়ে দরিদ্র দেশগুলোকে ২০ কোটি ডোজ কভিড-১৯ টিকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে কানাডা। জি-২০ সম্মেলনে এ অঙ্গীকার করে দেশটি। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্র–ডো জানান, ২০২২ সালের মধ্যে কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটির আওতায় কমপক্ষে ২০ কোটি ডোজ করোনা টিকা প্রদান করবে কানাডা।