প্রতিনিধি, বরিশাল: ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে মৎস্য আহরণের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর মেঘনায় ইলিশের আকাল দেখা দিলেও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাঙাশ। কয়েক দিন ধরে বরিশালের ইলিশ মোকামের আড়তগুলোয় পাঙাশের অধিক্য আড়তদারদের নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে।
গতকাল সকালে নগরীর মৎস্য অবতরণ কেন্দে র ঘাটে ট্রলারযোগে পাঙাশ নিয়ে আসা জেলে ইয়াসিন হাওলাদার বলেন, ভোলার পূর্বপাশে ভাটি মেঘনা আর পশ্চিমের তেঁতুলিয়া নদীর ভাটিতে সাগর মোহনা থেকে এ সময় যে পরিমাণ ইলিশ উজানে উঠে আসার কথা, তার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এরই মধ্যে জেলেদের মুখে হাসি ফুটেছে নদীতে প্রচুর পাঙাশ মাছ ধরা পড়ায়।
তিনি আরও বলেন, কয়েক দিন ধরে ভোলার উজানে চাঁদপুরের ভাটিতে হিজলা-সংলগ্ন মেঘনা ও তার শাখা নদ-নদীগুলোয় প্রচুর পাঙাশ ধরা পড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন থেকে ১০ কেজি ওজনের এসব মাছ নদীতে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও আড়তে আসার পর দু-তিন হাত ঘুরে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, শীতকালে মেঘনা ও এর শাখা নদ-নদীসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদীতে প্রচুর পাঙাশ ধরা পড়ে। এবার তা কিছুটা আগে মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার ভাটি থেকে উজানে চলে এসেছে। এমনকি গবেষণায় ২০১৯ সালে ইলিশের মূল প্রজননকালে ২২ দিনে দেশের প্রধান ইলিশ প্রজননক্ষেত্রগুলোয় পরীক্ষামূলক নমুনায়নে ৮৩ শতাংশ ইলিশের রেনুর সঙ্গে ১৭ শতাংশ অন্যান্য মাছের রেনু পোনাও পাওয়া যায়। ফলে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালে ২২ দিনে উপকূলে অন্যান্য মাছেরও নিরাপদ প্রজনন সম্পন্ন হচ্ছে, যা দেশে অন্যান্য প্রজাতির মাছের উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা রাখছে বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। এবার নদ-নদীতে গত কয়েক দিনের পাঙাশের আগাম বিচরণকে ভালো লক্ষণ মনে করে সহনীয় আহরণের ওপর গুরুত্ব দিতে চান মৎস্য বিজ্ঞানীরা। এ ব্যাপারে মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ইলিশ প্রজননের সময় শুধু পাঙাশ নয়, বিভিন্ন মাছেরও প্রাচুর্য লক্ষ করা যাচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরও নদ-নদীতে ইলিশের প্রাচুর্য কিছুটা কম থাকার বিষয়ে মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ দাস বলেন, অভিপ্রয়াণী মাছ ইলিশ জীবনচক্রে স্বাদু পানি থেকে নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে আবার স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়াণ করে। উপকূলের সাত হাজার বর্গকিলোমিটারের মূল প্রজনন ক্ষেত্রে মুক্ত ভাসমান অবস্থায় ডিম ছেড়ে বেশিরভাগ ইলিশ আবার সাগরের নোনা পানিতে বিচরণ করে। সুতরাং প্রজননের এ সময়ে দেশের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে ইলিশের বিচরণ অনেকটা সীমিত থাকা স্বাভাবিক বলেও তিনি উল্লেখ করেন।