নিজস্ব প্রতিবেদক : বৈধ কাগজ দেখাতে না পারায় আপন জুয়েলার্সের সাড়ে ১৩ মণ সোনা ও ৪২৭ গ্রাম হীরা আনুষ্ঠানিকভাবে জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সেগুলো জমা দেওয়া হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন।
মইনুল খান বলেন, একাধিকবার সময় দেওয়ার পরও আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষ স্বর্ণের বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়। এ কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণ জব্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে জব্দকৃত সম্পদের মধ্যে মাত্র দুই কেজি স্বর্ণ গ্রাহকের বলে তথ্য দিতে পেরেছে আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষ। তাই বাকি স্বর্ণ জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা রাখা হবে। তবে কোনো গ্রাহক যদি স্বর্ণ বা স্বর্ণালঙ্কার জমা রাখার কাগজপত্র দেখাতে পারেন, তাদের গচ্ছিত সম্পদ ফেরত দেওয়া হবে।
এসব স্বর্ণলঙ্কার আপাতত অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা রাখা হবে। এ ছাড়া বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। এরপরই স্থায়ীভাবে সরকারি সম্পদ হিসেবে প্রায় ২০০ কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার ভল্টে থাকবে বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ ও ১৫ মে শুল্ক গোয়েন্দারা আপন জুয়েলার্সের গুলশান ডিসিসি মার্কেট, গুলশান এভিনিউ, উত্তরা, সীমান্ত স্কোয়ার এবং মৌচাকের পাঁচটি শোরুমে অভিযান চালিয়ে প্রায় সাড়ে ১৩ মণ সোনা ও ৪২৭ গ্রাম হীরা সাময়িকভাবে জব্দ করে। এগুলো পরে আইনানুগভাবে প্রতিষ্ঠানের জিম্মায় দেওয়া হয়। এরপর আত্মপক্ষ সমর্থনে আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষকে তিনবার শুনানির সুযোগ দিলেও তারা কোনো প্রকার বৈধ কাগজ দেখাতে পারেনি। তবে আপন জুয়েলার্সের মালিকপক্ষের দেওয়া ১৮২ জনের তালিকার মধ্যে ৮৫ জন গ্রাহককে মেরামতের জন্য তাঁদের জমা দেওয়া প্রায় দুই দশমিক তিন কেজি স্বর্ণালঙ্কার অক্ষত অবস্থায় ফেরত দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি শাফাত আহমেদের বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ‘অবৈধ সম্পদ’ খুঁজতে তার প্রতিষ্ঠানের পাঁচটি বিক্রয়কেন্দ্রে গত ১৪ ও ১৫ মে অভিযান চালায় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। অভিযান আটক ১৩ মণ স্বর্ণ ও ৪২৭ গ্রাম হীরা আপন জুয়েলার্সের মালিকদের জিম্মায় দিয়ে শোরুমগুলো সিলগালা করে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি সাফাত, হালিম ওরফে নাঈম আশরাফ ও সাদমান সাকিফ এবং সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও তার দেহরক্ষী রহমত আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সাফাত ও নাঈমও আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।
তবে বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করা হলেও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় আপন জুয়েলার্সের বাধা নেই বলে জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নুরুল হুদা আজাদ। রোববার সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
শুল্ক গোয়েন্দার এ কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল যে আপন জুয়েলার্সের কাছে স্বর্ণের বৈধ কাগজপত্র নেই। সময় নিয়েও তারা তা দেখাতে পারেননি। যে কারণে তাদের সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে। শোরুমগুলো আর সিলগালা থাকছে না। বিকালেই আপন জুয়েলার্সের শোরুম পাঁচটি তাদের কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এখন থেকে তারা ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাতে পারবেন।’
তিনি বলেন, স্বর্ণ কেনা বাবদ অগ্রিম বুকিংকারীদের তালিকা তৈরি হয়েছে। ক্যাটাগরি ও তালিকা অনুযায়ী একটি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তালিকা মালিকপক্ষ ও আমাদের কাছে থাকছে। গ্রাহকরা কাগজ দেখিয়ে অর্ডারের পণ্য নিতে পারবেন।
Add Comment