শেয়ার বিজ ডেস্ক: সরকার ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিলে তার প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে প্রথমে ধর্মঘটের ডাক দেয় ট্রাক-কাভার্ডভ্যানসহ পণ্যবাহী যানগুলোর মালিক ও শ্রমিক নেতারা। পরে বাস মালিক সংগঠনও একই কর্মসূচিতে নামে। ধর্মঘটের আওতায় ট্রাক-কাভার্ডভ্যান বন্ধ থাকায় দেশের অভ্যন্তরে বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনও বন্ধ রয়েছে। পরিবহন ধর্মঘটে বেনাপোল থেকে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস না ছাড়ায় ভারতফেরত যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। সূত্র: বিডিনিউজ
বাগআচড়া নাভারণ বেনাপোল সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বাবুল হোসেন জানান, বেনাপোল থেকে প্রতিদিন দূরপাল্লার ৭০টি বাস চলাচল করে। শুক্রবার সকাল থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত বেনাপোল থেকে কোনো বাস ছাড়েনি। বন্দর থেকে কোনো পণ্যবাহী ট্রাকও ছেড়ে যায়নি।
তিনি বলেন, এতে বেনাপোল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-বরিশালসহ অন্তত ১২টি রুটের সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
গতকাল সরজমিন দেখা গেছে, যশোর-বেনাপোল ও নাভারণ-সাতক্ষীরা মহাসড়কে এবং নাভারণ-সাতক্ষীরা মোড় ও বেনাপোল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পরিবহন শ্রমিকদের বাধার কারণে যান চলাচল দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে। প্রাইভেটকার কিংবা মাইক্রোবাস তেমন চলাচল না করায় সাধারণ যাত্রীরা ট্রেন, ইজিবাইক, জেএসএ, ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও নসিমনে চলাচল করছেন।
গতকাল সকালে সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী নওরোজ আফরিন কান্তার সঙ্গে কথা হয় শার্শার নাভারণ-সাতক্ষীরা মোড়ে। কান্তা বলেন, আজ আমার ষষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষা। আজ (শনিবার) কলেজে যেতেই হবে। অ্যাডমিট কার্ড নিতে হবে। কিন্তু বাস চলছে না। ভেঙে ভেঙে ৫০ কিলোমিটার যাওয়া কী মুখের কথা? অথচ সরকার ইচ্ছে করলে পরীক্ষাটা বন্ধ করে দিতে পারত।
‘ঈগল’ পরিবহনের বেনাপোল অফিসের ব্যবস্থাপক এমআর রহমান রাশু বলেন, দূরপাল্লার সব বাস বন্ধ রয়েছে। এতে ভারতফেরত পাসপোর্ট যাত্রীরা পড়েছেন মহাদুর্ভোগে। তারা পরিবহন কাউন্টারে অলস সময় কাটাচ্ছেন।
‘সোহাগ’ পরিবহনের বেনাপোল কাউন্টার ম্যানেজার সহিদুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকরা ধর্মঘটে থাকায় বাস ছাড়া যাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলেই বাস ছাড়া হবে। বেনাপোলে বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারে কথা হয় ঢাকার এফ রহমান মন্টু, গোপালগঞ্জের জয়ন্তী তালুকদার ও সুরেশ তালুকদারের সঙ্গে।
জয়ন্তী বলেন, আমরা ভারতে গিয়েছিলাম চিকিৎসা করাতে। দেশে ফিরে আসার পর বুঝলাম ধর্মঘট চলছে। এখন কীভাবে বাড়ি যাব বুঝতে পারছি না। টাকাও বেশি নেই যে ট্যাক্সি রিজার্ভ করে যাব। এজন্য কাউন্টার বসে আছি।
ফজলুর রহমান মন্টু বলেন, জরুরি ঢাকায় ফেরা প্রয়োজন। পরিবহন বন্ধ থাকায় বেকায়দায় পড়েছি। রাতে বাস ছাড়বে এমন কথাও কেউ বলতে পারছে না; তাই বিকল্প পথে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
এদিকে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল না করায় বেনাপোল বন্দর থেকে খালাস করা পণ্য নিয়ে দুই দিন ধরে কোনো ট্রাক বন্দর ছেড়ে যাচ্ছে না বলে জানান বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী।
যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার অথবা ভাড়া বাড়ানো না হলে ততদিন তারা রাস্তায় গাড়ি চালাবেন না।
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক মামুন কবীর তরফদার বলেন, ধর্মঘটের আওতায় ট্রাক, কাভার্ডভ্যান থাকায় বন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরে পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। বন্দর এলাকায় পণ্যবোঝাই অনেক ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে বন্দর অভ্যন্তরে পণ্য উঠানামার কাজ চলছে বলে জানান তিনি।