অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত সেসব ওষুধকেই বলা হয়, যা মানুষ ও পশুর শরীরে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কাজ করে। এসব ওষুধ হয়তো ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে অথবা এদের দৈহিক বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার রোধ করে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম আশীর্বাদ হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিকের আবিষ্কার। একসময় মানুষ কলেরা, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়ার মতো অসুখের কাছে সহজেই পরাজয় বরণ করে নিত। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার এখন এসব সমস্যা থেকে খুব দ্রুতই সমাধানের পথ দেখিয়ে দিচ্ছে। তবে বর্তমানে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার, অপব্যবহার কিংবা উপযুক্ত ব্যবহারের অভাবে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের মতো ভয়াবহ পরিণতির দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিট্যান্স বলতে সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার ক্ষমতাকে বোঝায়। সাধারণ ব্যাকটেরিয়া তাদের ডিএনএ কিংবা জিনের মধ্যে কিছু পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে কার্যকর হয়ে ওঠে। এসব ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতিতে অভিযোজিত হয়ে যাওয়ার ফলে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের কার্যকারিতা প্রকাশিত হয় না। অর্থাৎ পূর্বে ব্যবহৃত ওষুধের বিরুদ্ধে ব্যাকটেরিয়া সুরক্ষা বলয় তৈরি করে নেয়। যার ফলে অভিযোজিত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া নিজেদের স্বাভাবিক গতিতে বেড়ে উঠে এবং বংশবিস্তার চালিয়ে যায়। অর্থাৎ সচরাচর ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়াকে থামাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। যার ফলে রোগী ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অস্ত্র হারিয়ে ফেলে।
সাধারণত রোগীর খামখেয়ালিতে যেকোনো ধরনের শারীরিক অসুস্থতায় নিজের ইচ্ছেমতো অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়া, অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স সম্পন্ন না করা। যেমন ৭ দিনের কোর্স ৩ দিন পর ভালো বোধ করার ফলে পুরোটা শেষ না করে বন্ধ করে দেয়া। যার ফলে ব্যাকটেরিয়া পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে সুপ্তাবস্থায় থেকে যায়। যারা পরে অভিযোজিত হয়ে রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটায়। ফলে পরবর্তী সময়ে পূর্বে ব্যবহƒত অ্যান্টিবায়োটিক আর এসব ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে না। আর পাশাপাশি এসব রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া বংশবিস্তারের মাধ্যমে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে যাচ্ছে; যা আমাদের বিশ্বের জন্য ভয়াবহ হুমকির আভাস দিচ্ছে। ভবিষ্যতে দেখা যাবে অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের হাতের নাগালে অহরহ অ্যান্টিবায়োটিক থাকলেও সেগুলো কোনো কাজেই আসবে না। যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়াঘটিত অসুস্থতায় অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া আামাদের হাতে আর কোনো উপায় অবশিষ্ট থাকবে না।
এ সমস্যা সমাধানে আমাদের এখনই সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। যেমন রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজের ইচ্ছেমতো কখনও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করা। ফার্মাসিগুলো নজরদারি করে নিশ্চিত করা যেন ব্যবস্থাপত্র ব্যতীত কোনোরকম অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করতে না পারে। চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর দেয়া ব্যবস্থাপত্র কিংবা নিয়মকানুন মতো ওষুধ সেবন করতে হবে। কোর্স সম্পন্ন করার পূর্বে সুস্থতা বোধ করলেও অ্যান্টিবায়োটিক সেবন বন্ধ করা যাবে না। অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিকের পূর্ণাঙ্গ কোর্স শেষ করতে হবে। এখনই সতর্ক না হলে ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতে হবে।
আনোয়ার হোসেন রাজু
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়