ডায়াবেটিসে মানসিক সুস্থতা

ডায়াবেটিস দীর্ঘমেয়াদি রোগ। এটি রোগীর জীবনযাত্রাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিসের কারণে কারও কারও মানসিক অবসাদ দেখা দিতে পারে। গবেষণা বলছে, ডায়াবেটিস নানা ধরনের মানসিক সমস্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আবার মানসিক রোগের তীব্রতায় যারা ভুগছেন, তাদের ডায়াবেটিস হলে তা নিয়ন্ত্রণ করাও বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষত যাদের রক্তের গ্লুকোজ বেশি মাত্রায় থাকে, যাদের ইনসুলিন নেয়া বাধ্যতামূলক, তাদের বড় ধরনের মানসিক রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হতে পারে।

ডায়াবেটিস ও বিষন্নতা: বিভিন্ন দেশের গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিক রোগীদের অন্যদের চেয়ে দু-তিনগুণ বেশি হারে বিষন্নতায় ভোগার ঝুঁকি রয়েছে। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, এসব বিষন্ন রোগীর মাত্র ২৫-৫০ শতাংশ চিকিৎসা পান, যদিও রোগটি শনাক্ত করা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে কঠিন কোনো কাজ নয়। চিকিৎসা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খুবই ফলপ্রসূ এবং ব্যয়বহুলও নয়। বিনা চিকিৎসা বা বিলম্বিত চিকিৎসায় রোগীর মানসিক ও শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকবে। অন্যদিকে কেউ যদি দীর্ঘদিন মানসিক চাপ বা বিষন্নতায় ভোগেন, তাহলে তার ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

ডায়াবেটিস ও অন্যান্য মানসিক সমস্যা: মানসিক রোগীদের একটা বড় অংশ ডায়াবেটিসে ভোগেন এবং শরীরে একই সঙ্গে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকির্পূণ বৈশিষ্ট্য উপস্থিত থাকে। যেমন সিজোফ্রেনিয়া রোগীকে তার সমবয়সীদের তুলনায় অনেক বেশি সময় বিছানায় থাকতে হয়। তারা কম স্বাস্থ্যকর সুষম খাবার খেয়ে থাকেন। এজন্য তারা বেশি করে ডায়াবেটিস ও দৈহিক স্থূলতায় ভোগেন এবং হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে। সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের ১৬-২৫ শতাংশ ডায়াবেটিসে ভোগেন। বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার হার বাড়ে।

করণীয়: ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে বিষন্নতার কোনো লক্ষণ দেখা দিচ্ছে কি না, আচার-আচরণে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে কি না, হতাশায় আচ্ছন্ন কি না, খাদ্যাভ্যাসে কোনো পরিবর্তন আসছে কি না প্রভৃতি রোগীর নিজের এবং বিশেষভাবে তার পরিচর্যাকারীদের সব সময় খেয়াল রাখা উচিত। মনে রাখতে হবে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। তাই রোগীকে সব সময় উৎফুল্ল, কর্মব্যস্ত ও নিয়ম মেনে চলার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। একইভাবে বিষন্নতায় আক্রান্ত বা চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরও উচিত নিয়মিত বিরতিতে ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করা। রোগীর উচিত নিজের শরীরের যত্ন নিজেই নেওয়ার অভ্যাস করা। আর যেসব রোগী নিজের যত্ন নিজে নিতে অক্ষম, তার স্বজনদের উচিত ভালোভাবে এবং সব সময়ের জন্যই তার প্রতি খেয়াল রাখা। আর প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া। 

ডা. শাহজাদা সেলিম

সহযোগী অধ্যাপক, অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ

বিএসএমএমইউ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০