নয়ন খন্দকার, ঝিনাইদহ: উফশী রবি-১ জাতের পাটবীজ উৎপাদন করে সাফল্যের আশা করছেন ঝিনাইদহের কৃষকরা। নতুন জাতের এ পাট থেকে সাধারণ তোষা জাতের চেয়ে কমপক্ষে ২০ শতাংশ বেশি ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা। মাত্র ১১০ দিনে এ পাট থেকে বীজ সংগ্রহ করা যায় বলে ঝিনাইদহের কৃষকরা চাষ করে বীজ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ও সিমলা রোকনপুর ইউনিয়ন এবং কোটচাঁদপুরের এলাঙ্গী ইউনিয়নের ৯৭ জন কৃষক এবার ১৬৮ বিঘা জমিতে রবি-১ জাতের পাট চাষ করে বীজ উৎপাদন করছেন। এবার প্রায় ৭৬২ মন পাট বীজ এই ৯৭ জন কৃষক উৎপাদন করবেন। প্রতি মণ বীজ বিক্রি হবে ৬০০০ টাকা দরে। ভারতীয় পাট বীজ যাতে বাংলাদেশের বাজার দখল করতে না পারে এজন্য কাজটি বাস্তবায়ন ও কারিগরি সহায়তা করছে ফেরোমন ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছে স্থানীয় উপজেলা কৃষি অফিস ও ইউএসএআইডি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে সাধারণ ভারতীয় পাট বীজ ব্যবহার করে পাট উৎপন্ন করেন কৃষকরা। কিন্তু অনেক সময় ভারতীয় পাট বীজ থেকে ফলন তেমন হয় না। লোকসানে পড়েন কৃষকরা। এছাড়া ভারতীয় বীজের দাম তুলনামূলক বেশি। সোনালি আশের পুরোনো গৌরব ফিরিয়ে আনতে নতুন উদ্যোমে মাঠে নামে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট। তারা রবি ১ জাতের পাট বীজ উৎপাদন করেন।
ফেরোমন ইন্ডাস্ট্রিজ আশা করছে, প্রতি বিঘা জমি থেকে চার মণ করে বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। সে ক্ষেত্রে কৃষকদের কাছ থেকে প্রায় ৬৭২ মণ পাট বীজ উৎপাদন হবে। প্রতি মণ বীজ কৃষকদের করছে থেকে ৬০০০ টাকা দরে কিনবে ফেরোমন। এক বিঘা জমি থেকে একজন কৃষক মাত্র ১১০ দিনে ২০ থেকে ২৪ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন।
কালীগঞ্জের বড় সিমলা গ্রামের জাফর আহমেদ নামের একজন কৃষক জানান, তিনি এবার তার এক একর জমিতে এই রবি-১ জাতের পাট বীজ রোপণ করেন। তিনি আশা করছেন এক একর জমিতে প্রায় ১২ মণ রবি এক জাতের বীজ উৎপাদন করতে পারবেন। ফলন ভালো হয়েছে। মাত্র ১১০ দিনে তিনি তার জমি থেকে ৭০ থেকে ৭২ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন। এক একর জমিতে তিনি খরচ করেছেন আনুমানিক ১২ হাজার টাকা।
ফেরোমনের প্রোডাকশন সুপারভাইজার মো. জহুরুল ইসলাম জানান, এ বছর থেকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে দুটি উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ৯৭ জন কৃষক এ পাট বীজ উৎপাদন করবে। পরবর্তীকালে আরও কৃষককে রবি-১ জাতের পাট বীজ উৎপাদনে কৃষককে কারিগরি সহায়তা দেয়া হবে। তাদের উৎপাদিত সব বীজ কেনা হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার শিকদার মোহায়মেন আক্তার জানান, উপজেলার যেসব কৃষক এই পাট বীজ উৎপাদন করছেন, তাদের কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া উপসহকারী কৃষি অফিসারা নিয়মিত কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এ জাতের পাট বীজ উৎপাদন করে কৃষকরা অল্পসময়ে লাভবান হবেন। এলাকায় যদি আরও বেশি পাট বীজ উৎপাদন করা যায় তাহলে ভবিষ্যতে এলাকায় পাটের উৎপাদন বাড়বে।