কভিড টিকায় খরচ কত বলতে নারাজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: কয়েক মাস আগে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে করোনাভাইরাসের টিকা কেনার খরচ প্রকাশ করে আলোচনার জন্ম দিলেও জাতীয় সংসদে এ খাতে ব্যয়ের তথ্য প্রকাশ করলেন না স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেছেন, উৎপাদনকারী কোম্পানির সঙ্গে ‘নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট’-এর কারণে সংসদে অর্থ খরচের হিসাব প্রকাশ করা ‘সমীচীন হবে না’।

তবে করোনাভাইরাসের কত টিকা এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে, সে তথ্য সংসদকে দিয়ে মন্ত্রী বলেছেন, সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে সততা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে ভ্যাকসিন কেনা হয়েছে।

গতকাল জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে আওয়ামী লীগের আবুল কালাম আজাদ জানতে চান, করোনাভাইরাসের কত টিকা সংগ্রহ করা হয়েছে, আর সেজন্য কত টাকা খরচ হয়েছে?

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।

গত ৯ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে করোনাভাইরাসের চিকিৎসার ব্যয় জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, এক কোটি এক লাখ ৫০ হাজার ডোজ টিকা কেনা হয়েছে (ওই সময় পর্যন্ত)। প্রতি ডোজ তিন হাজার টাকা হিসেবে মোট তিন হাজার ৪৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

সংসদে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ২১ কোটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার ডোজ টিকা কেনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চীন থেকে সাত কোটি ৭০ লাখ ডোজ সিনোফার্মা, সাত কোটি ৫১ লাখ ডোজ সিনোভ্যাক, ভারত থেকে তিন কোটি কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সের আওতায় দুই কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার ডোজ সিনোফার্মের টিকা।

মন্ত্রী বলেন, ‘চীন, ভারত ও কোভ্যাক্স থেকে সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে সততা ও স্বচ্ছতার নিশ্চিত করে ভ্যাকসিন কেনা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, সিসিজিপি ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসাপেক্ষে কেনা হয়েছে। নন-ক্লোজার এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে ভ্যাকসিন কেনার কারণে সংসদে অর্থ খরচের হিসাব প্রকাশ করা সমীচীন হবে না।’

ভোলা-২ আসনের আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের জন্য মোট ২৯ কোটি ৪৪ লাখ ১০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিনের সংস্থান করা হয়েছে। এ পর্যন্ত (১৩ নভেম্বর) আট কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৪ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।

এর মধ্যে পাঁচ কোটি ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৪ জনকে প্রথম ডোজ এবং তাদের তিন কোটি ২৮ লাখ পাঁচ হাজার ১৯০ জনকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।

দেশে পুষ্টিহীনতার বিষয়ে সব বয়সের মানুষের নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান সরকারের হাতে না থাকলেও এক্ষেত্রে সফলতার দাবি করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের প্রশ্নের জবাবে তিনি নারীদের পুষ্টি পরিস্থিতির একটি চিত্র তুলে ধরেন।

মন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের অপুষ্টিজনিত কম ওজন ২০১৭-১৮ সালে ছিল ১২ শতাংশ এবং ২০০৭ সালে তা ৩০ শতাংশ ছিল।

ভোলা-৩ আসনের নুরুন্নবী চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ১২ হাজার ৫৯২টি ওষুধের দোকান শনাক্ত করা হয়েছে, যেগুলোর ড্রাগ লাইসেন্স নেই।

তিনি বলেন, ‘লাইসেন্সবিহীন দোকান শনাক্ত ও লাইসেন্স দেয়া চলমান প্রক্রিয়া। ৫৫ জেলা কার্যালয় ও আট বিভাগীয় কার্যালয়ের মাধ্যমে সারাদেশে ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিয়মিত দোকান পরিদর্শন করেন। এক্ষেত্রে লাইসেন্সবিহীন দোকান শনাক্ত হলে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়। লাইসেন্সবিহীন দোকান মালিকদের নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া পূরণ করে ড্রাগ লাইসেন্স গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে।’

বগুড়া-৬ আসনে বিএনপির সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, মাদকসেবীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে দেশের প্রতিটি জেলা হাসপাতালে পৃথক ইউনিট চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

ময়মনসিংহ ১১ আসনের কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ওষুধের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে সরকার ‘সচেষ্ট’ রয়েছে। নকল-ভেজাল ওষুধ বিক্রি প্রতিরোধে সরকার কঠোর। আর নকল ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের বিরুদ্ধে সরকার নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।

২০২০-২১ অর্থবছরে মোবাইল কোর্টে এক হাজার ৭১৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাতে সাত কোটি ৫৮ লাখ একশ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৪৬টি ওষুধ কোম্পানির উৎপাদন লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে।

এর মধ্যে ১৭টি হোমিও ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি, চারটি হার্বাল ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি, পাঁচটি অ্যালোপ্যাথিক, ছয়টি ইউনানি ও ১৪টি আয়ুর্বেদিক ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি রয়েছে।

এসব কোম্পানির সব ধরনের ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ স্থগিত করা হয়েছে বলে সংসদে জানান মন্ত্রী।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০