চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য টাগবোট নির্মাণ

চুক্তির চার বছরেও বানাতে পারেনি ওয়েস্টার্ন মেরিন

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: ২০১৭ সালের জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য একটি টাগ বোট নির্মাণে চুক্তি করে। এটি নির্মাণে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৩০ জুন ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা পরিশোধ করে। কিন্তু চার বছরেরও এ টাগ বোট নির্মাণ শেষ করতে পারেনি কোম্পানিটি। মূলত মূলধন সংকট, শ্রমিক অসন্তোষ, পরিচালকদের দ্বন্দ্ব ইত্যাদি কারণে গত তিন বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনায় বহুমাত্রিক সমস্যায় পড়ে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড।

সূত্রমতে, বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষের অবস্থানকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ২০০০ সালে যাত্রা শুরু হলেও পুঁজিবাজারের নিবন্ধিত হয় ২০১৪ সালে। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে ও বিদেশে বেশ কয়েকটি জাহাজ সরবরাহ করে। জাহাজ নির্মাণের ধারাবাহিতকায় ২০১৭ সালের চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের জন্য একটি টাগ বোট নির্মাণে চুক্তি করে। এর নির্মাণ মূল্য ছিল ৩৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ওয়েস্টার্ন মেরিন ৩০ জুন ২০১৮ সাল পর্যন্ত বন্দর থেকে ২৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা গ্রহণ করে। এ সময়ে টাগ নির্মাণ কাজ অগ্র্রগতি হয়েছিল ৬৮ শতাংশ।

পরিকল্পনা অনুসারে ২০১৯ সালের ৩০ জুনে পুরোপুরি কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলতি মূলধন সংকট, শ্রমিক অসন্তোষ, পরিচালকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ইত্যাদি গত তিন বছর ধরের ব্যবসা পরিচালনায় বহুমাত্রিক সমস্যায় পড়ে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। এমন কি জমির ইজারাদারের হাজি সাবের আহমেদের ভাড়া দিতে না পারায় তিনিও জমির দখল বুঝে নেন। ফলে গত চার বছরের প্রতিষ্ঠানটি বিআইডব্লিউটিসি’র দুটি যাত্রীবাহী জাহাজ, চট্টগ্রাম বন্দর ও পায়রা বন্দরের দুটি, এস আলম গ্রুপের ১০ কার্গো জাহাজসহ আরও প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশের বিপরীতে জাহাজ সরবরাহ করতে পারেনি।

সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, পুঁজিবাজার থেকে বিপুল পরিমাণে পুঁজি সংগ্রহের পরও প্রতিষ্ঠান কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি তালিকায় নাম উঠে আসে, চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা হয়, পাওনাদারের পাওনা পরিশোধে একাধিকবার ব্যর্থতা, নগদ প্রবাহে সংকট, প্রকল্প কাজে ধীরগতি, নতুন করে অর্ডার না পাওয়া, শ্রমিক অসন্তোষ ইত্যাদি রেগে থাকে। মূলত ওয়েস্টার্ন মেরিনের পরিচালনা পর্ষদে যোগ্য নেতৃত্ব না থাকায় গত কয়েক বছর ধরে বহুমুখী সমস্যায় আছে। কারখানা সম্প্রসারণ হওয়ার সময় অতিরিক্ত খরচ, প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ, অধিক দামে যন্ত্রপাতি ক্রয়, প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্টক মজুদ ইত্যাদি ঘটনা ঘটে। এমনকি সাবেক কর্মকর্তাদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করেনি। পাওনাদারদের সহজে দেখা না দেয়ার জন্য মাঝে একবার অফিসও পরিবর্তন করে। এসব কারণে একাধিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সম্পর্কের ফাটল ধরে। আর প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতায় ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ব্যবসাও মন্দার ছোঁয়া লাগে। ফলে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে ব্যাংক দায়ের পরিমাণ।

এ বিষয়ে জানতে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের করপোরেট অফিসে গত সপ্তাহে সরাসরি যোগাযোগ করা হলে অফিসের কর্মকর্তারা বলেন, ‘আমাদের এমডি অফিসে নেই। অফিসের বাইরে আছেন।’ এরপর ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি। ফলে তার মন্তব্য পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, কভিডের কারণে সময়মতো ডেলিভারি দিতে পারেনি। এতে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেছে। তারা আগামী মাসে ডেলিভারি দেবেন বলে জানিয়েছেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০