সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের উৎপাদন বন্ধের তথ্যে কারচুপি

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেষ পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল। তবে উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা দিলেও এতে কারচুপির আশ্রয় নিয়েছে কোম্পানিটি। জানা যায়, ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে (প্রায় আট মাস) কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ থাকলেও ‘গত ১ মে থেকে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে’ বলে দাবি করেছে কোম্পানিটি। সিঅ্যান্ডএ’র দেওয়া ঘোষণা গতকাল বুধবার ডিএসই’র ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, মালিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কারণে বস্ত্র খাতের কোম্পানি সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের উৎপাদন গত আট মাস ধরে বন্ধ। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের শর্ত পূরণে ব্যর্থতার কারণে কোম্পানিটির বিদেশি ক্রেতারাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু উৎপাদন বন্ধের বিষয়ে অনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। ডিএসই-সিএই ও বিএসইসিকেও কিছু জানানো হয়নি। এ বিষয়ে গত ২৯ মে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য গোপনের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করে শেয়ার বিজ। এর জের ধরে উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা দিলো সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল।

ঘোষণা অনুযায়ী, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের নিরাপত্তা বিষয়ক শর্ত পূরণে ব্যর্থতার কারণেই ১ মে থেকে উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। বৈদ্যুতিক সংযোগ, অগ্নি নিরাপত্তা ও কাঠামোগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরই পুনরায় উৎপাদনের অনুমতি পাবে কোম্পানিটি।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল। শতভাগ রফতানিমুখী এ প্রতিষ্ঠানটি কানাডা, আমেরিকা, জার্মানি ও ইউরোপিয়ান ক্রেতাদের চাহিদামতো পণ্য রফতানি করতো। কিন্তু অগ্নি নিরাপত্তা সংক্রান্ত অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের শর্ত পূরণে ব্যর্থতার কারণে বিদেশি পোশাক ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এ কারণে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের কর-পরবর্তী মুনাফা কমেছে। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে প্রায় ২৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে কোম্পানিটি। যা এর আগের আর্থিক বছরে প্রায় ৪৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ছিল।

অন্যদিকে বিল বকেয়া ও অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহারের অভিযোগে ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সিঅ্যান্ড টেক্সটাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড। এরপর থেকে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ। উৎপাদন বন্ধের পর পাওনা পরিশোধ না করেই শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এ নিয়ে শ্রমিক সংগঠন, কল-কারখানা ও চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদফতরের সঙ্গে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের দেন-দরবার চলছে।

এর আগে গত ৩০ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক স্বাক্ষরিত এক নোটিসে (সূত্র: সিঅ্যান্ডএ প্রশাসন/২০১৭/৩১) কারখানার উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই নোটিসে বলা হয়েছে, ‘সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের বকেয়া গ্যাস বিল ও অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহারের কারণে গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। এ ছাড়া অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স কর্তৃক নির্দেশিত রেট্রোফিটিংসহ ফায়ার সেফটি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে না পারায় বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো একে একে তাদের সব ধরনের আদেশ বাতিল করেছে। তাই ১ মে থেকে কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ থাকবে।’

এদিকে গত বছরের অক্টোবরে উৎপাদন বন্ধের কারণে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সর্বশেষ কোম্পানিটির শ্রমিকসংখ্যা মাত্র ২৭ জনে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন ও পণ্য রফতানি বন্ধ থাকায় কর্মরত ওই ২৭ শ্রমিকও নিয়মিতভাবে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে বকেয়া পাওনা চেয়ে লিখিতভাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে আবেদন করেছেন শ্রমিকরা।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল। ১০ টাকা ইস্যুমূল্যে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ারদর বর্তমানে ফেসভ্যালুর নিচে রয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ধারণ করা শেয়ারের পরিমাণ ৩০ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২২ দশমিক ১৪ শতাংশ হয়েছে। এ ছাড়া  কোম্পানিটির প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল সর্বশেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৯ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। গত এক বছরে শেয়ারদর সাত টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১৩ টাকা ১০ পয়সায় ওঠানামা করেছে। ২০১৬ সালে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০