ইসমাইল আলী: পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ একাধিকবার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ খাতে ব্যয়ও বেড়েছে কয়েক দফা। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জুনে জমি অধিগ্রহণ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বিশেষ প্রক্রিয়ায় সে ব্যয় অনুমোদন করে একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক কমিশনের নির্বাহী কমিটি)। তবে আবারও প্রকল্পটির জমি অধিগ্রহণ ব্যয় প্রায় ৩৪৮ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।
যদিও বরাদ্দের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ে এবার একনেক বা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়া হয়নি। শুধু সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রাণালয়ের অনুমোদনক্রমে বাড়তি অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। অথচ ৩৪৮ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় অনুমোদনের এখতিয়ার মন্ত্রণালয়ের নেই। আর মন্ত্রী মাত্র ৪০ কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়তি ব্যয় অনুমোদন করতে পারেন।
পদ্মা সেতুর সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনে বাড়তি ব্যয়ের তথ্য উঠে এসেছে। এতে প্রকল্পটির খাতভিত্তিক ব্যয় ও বাস্তবায়ন অগ্রগতির তথ্য বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুযায়ী পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ দুই হাজার ৬৯৩ দশমিক ২১ হেক্টর। আর এ খাতে বরাদ্দ আছে দুই হাজার ৬৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। তবে জমি অধিগ্রহণ, বন্দোবস্ত ও হুকুম দখলের জন্য ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ তিন হাজার ৪৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আর বরাদ্দের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, জমি অধিগ্রহণে ব্যয় বেশি হতে পারে, তবে টাকা অঙ্কটা ঠিক মনে নেই। এটি সরকারের সবচেয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প, তাই বাড়তি অর্থ ব্যয়ের জন্য পৃথক অনুমোদনের দরকার নেই। প্রকল্পটির কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয় শুধু নয়, প্রয়োজনে প্রকল্প পরিচালক নিজেই বাড়তি অর্থ ব্যয়ের অনুমোদন দিতে পারে। আর প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে ডিপিপি সংশোধনের সময় বাড়তি ব্যয় সমন্বয় করা হবে।
যদিও প্রকল্প পরিচালকের এ দাবি সঠিক নয় বলে মনে করেন সেতু বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। একাধিক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, কোনো প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধন করতে হলে আর তা ৪০ কোটি টাকার মধ্যে হলে মন্ত্রী সে ব্যয় অনুমোদন করতে পারেন। এর বেশি হলেই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও একনেকের অনুমোদন নিতে হয়। অগ্রাধিকারের যুক্তিতে এক্ষেত্রে অনুমোদন ছাড়া কোনোভাবেই ৩৪৮ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয়ের সুযোগ নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেলায় অধিগ্রহণকৃত জমির পরিমাণ ৩২৯ দশমিক ৭৬ হেক্টর। আর দখল বুঝে নেয়া হয়েছে ৩২০ দশমিক শূন্য চার হেক্টর। মাদারীপুর জেলায় অধিগ্রহণকৃত জমির পরিমাণ এক হাজার ৫৮৬ দশমিক ৭৫৬২ হেক্টর এবং দখল বুঝে নেয়া হয়েছে ৫৫৩ দশমিক ১৮ হেক্টর। শরীয়তপুর জেলায় অধিগ্রহণকৃত জমির পরিমাণ ৬১০ দশমিক ৯৬ হেক্টর এবং দখল বুঝে নেয়া হয়েছে ৫৯৭ দশমিক ৯৫ হেক্টর।
তিন জেলায় মোট অধিগ্রহণকৃত জমির পরিমাণ দুই হাজার ৫২৭ দশমিক ৪৭৬২ হেক্টর এবং দখল বুঝে নেয়া হয়েছে এক হাজার ৪৫৩ দশমিক ১৭ হেক্টর। আর হুকুম দখল করা হয়েছে ১৩৯ দশমিক শূন্য সাত হেক্টর।
প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু প্রকল্পকে ১১টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে মূল নির্মাণ খাতে পাঁচ প্যাকেজে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৪৪১ কোটি সাত লাখ টাকা। আর জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৮৪৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এছাড়া পরামর্শক ও অন্যান্য খাত মিলিয়ে ব্যয় আরও তিন হাজার ৯০২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এতে নির্মাণব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তবে জমি অধিগ্রহণ ব্যয়, পরামর্শক নিয়োগ ব্যয় প্রভৃতি খাতে বৃদ্ধি পাওয়ায় সেতুটি নির্মাণব্যয় আরও বাড়তে পারে।
এদিকে মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পদ্মায় সড়ক ও রেল সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এতে প্রকল্প সংশোধনের মাধ্যমে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০১১ সালে তা অনুমোদন করা হয়। আর ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে এ ব্যয় দ্বিতীয় দফা বেড়ে হয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এরপর জমি অধিগ্রহণ বৃদ্ধির যুক্তিতে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছিল ২০১৮ সালের জুনে।