আরিফ হোসেন, বরিশাল: বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন রোগী ও স্বজনরা। প্রতিনিধিদের ভিজিটের সময় বেঁধে দেয়া হলেও তা মানছেন না তারা।
এমনই একটি চিত্র মঙ্গলবার এ প্রতিবেদকের চোখে পড়ে। দেখা গেছে, হাসপাতালের প্রধান ফটক তাদের দখলে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লেগে থাকে জ্যাম। সব কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাতে রয়েছে স্মার্টফোন। চিকিৎসকের কক্ষ থেকে রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিয়ে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের রাস্তার মাঝে দাঁড় করিয়ে একের পর এক ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা প্রেসক্রিপশনের ছবি মোবাইল ফোনে তুলতে থাকে। এজন্য রোগীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় প্রেসক্রিপশনটি প্রতিনিধিদের হাত থেকে ফেরত নেয়ার জন্য।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহে ৬ দিন তারা সকাল ৯টার আগে ও দুপুর ১টার পর হাসপাতালে ডাক্তার ভিজিট করতে পারবে। কিন্তু নিয়ম করা হলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে একাধিক কর্মচারীদের অভিযোগ।
শেবাচিম হাসপাতালের কর্মচারী কল্যাণ সমিতির এক নেতা বলেন, কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ড প্রতিদিনই দখলে থাকেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। রোগী দেখার সময় চিকিৎসকদের কাছে গিয়ে তাদের নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ লেখার জন্য চিকিৎসকদের অনুনয়-বিনয় করেন। অনেক ক্ষেত্রে উপঢৌকনও দেয়া হয় চিকিৎসকদের। শুধু তাই নয়, চিকিৎসকদের রুমে থাকা এমএলএসদেরও বেলা সাড়ে ১১টা বাজার আগেই পৌঁছে দিচ্ছে নাশতাসহ বিভিন্ন ধরনের গিফট।
উল্লেখ্য, ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের উৎপাত বন্ধ করতে কয়েকদিন আগে কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও ওয়ার্ডগুলোয় অভিযান চালিয়েছে। এ সময় বিক্রয় প্রতিনিধিরা পালিয়ে গেলেও তাদের ফেলে যাওয়া ব্যাগ জব্দ করা হয়েছিল। তারপরও তাদের দৌরাত্ম্য থামাতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। রোগী চেম্বার থেকে ফেরার পথে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাহেঁচড়া করেন কোম্পানির লোকরা। তাদের কোম্পানির নাম না লিখলেও অনেক সময় নিজেদের কলম দিয়ে ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসকের দেয়া ওষুধ পরিবর্তন করে নিজেদের কোম্পানির ওষুধ লিখে দেয়।
হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের উৎপাত বন্ধ করতে পরিচালকের আরও কঠোর হতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা।
হাসপাতাল পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুর ইসলাম বলেন, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালে চিকিৎসকদের ভিজিট করার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও তারা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাসপাতালে ভিড় জমান। এতে রোগী ও চিকিৎসক উভয়কেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এর আগেও একবার অভিযানে তাদের ব্যাগ জব্দ করার পর তারা নির্দিষ্ট সময় ছাড়া হাসপাতালে না আসার অঙ্গীকার করেছিলেন। অঙ্গীকার না মানলে ফের তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।