নজরুল ইসলাম: মডার্নার প্রথম ডোজ টিকা দেয়া বন্ধ রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন মাস। তাই মডার্নার টিকা নেয়ার ইচ্ছা থাকার পরও অন্য টিকা নিচ্ছেন তারা। কিন্তু জেনে অবাক হবেন, মডার্নার প্রথম ডোজ টিকা দেয়া বন্ধ হয়নি। গত ১০ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক নির্দেশনায় সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছিল, দেশে ১২ আগস্ট থেকে মডার্নার প্রথম ডোজ টিকা দেয়া বন্ধ হয়ে যাবে। শুরু হবে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া। দেশে তখন কভিডের প্রথম ডোজ টিকা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি মডার্না ও চীনে তৈরি সিনোফার্মের টিকা দেয়া হচ্ছিল।
সংরক্ষণ সহজ হওয়ায় উপজেলা পর্যায়ে সিনোফার্মের টিকা দেয়া হচ্ছিল। আর যেহেতু মডার্নার টিকা সংরক্ষণ জটিল, তাই তা শহরে রেখে সেখানকার মানুষদের দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু ১২ আগস্টের পরও মডার্নার প্রথম ডোজ দেয়া হয়, যা এখনও চলছে, তবে তা অনেকটাই গোপনে।
গত ১৪ আগস্ট পর্যন্ত মোট ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ১৪০ জন ও গত ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২৭ লাখ ১৫ হাজার ১৩ জন মডার্নার প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন। সে হিসাবে ১৪ আগস্ট থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২ লাখ ৫৬ হাজার ৮৭৩ জন মডার্নার প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন। তবে মডার্নার টিকা প্রথম ডোজ এখন কারা পাচ্ছেন? কোন কোন টিকাকেন্দ্রে দেয়া হচ্ছে? সে বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোনো তথ্য প্রকাশ করছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত ১৪ আগস্ট কভিড ভ্যাকসিন প্রদান তথ্যের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২৭ হাজার ৭৫১ জন পুরুষ ও ২৫ হাজার ৬৮৯ জন নারীসহ মোট ৫৩ হাজার ৪৪০ জন মডার্নার প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন। আর শুরু থেকে ওইদিন পর্যন্ত ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ১৪০ জন মডার্নার প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন। এরপর ১৬ আগস্ট ১৫ হাজার ২৫২ জন পুরুষ ও ১২ হাজার ২৭৬ জন নারীসহ মোট ২৭ হাজার ৫২৮ জন, ১৭ আগস্ট ৩ হাজার ৮৪৮ পুরুষ ও ৯৬৩ নারীসহ মোট ৪ হাজার ৮১১, ১৮ আগস্ট ৩ হাজার ৮৪৬ পুরুষ ও ১ হাজার ৪১১ নারীসহ মোট ৫ হাজার ২৫৭, ১৯ আগস্ট ৫ হাজার ১৬ পুরুষ ও ৬৪২ নারীসহ মোট ৫ হাজার ৬৫৮, ২১ আগস্ট ১ হাজার ৬২১ পুরুষ ও ৪৬৭ নারীসহ মোট ২ হাজার ৮৮, ২২ আগস্ট ৭২৮ পুরুষ ও ৪৬০ নারীসহ মোট ১ হাজার ১৮৮ জন মডার্নার টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। ১২ আগস্টের পরও এভাবে প্রতিদিনই মডার্নার টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে, যা এখনও চলছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত ২৫ নভেম্বর কভিড ভ্যাকসিন প্রদান তথ্যের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৪৯৭ পুরুষ ও ৬৫০ নারীসহ এদিন মোট ১ হাজার ১৪৭ জন মডার্নার প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন। আর ওইদিন পর্যন্ত মোট ২৭ লাখ ১৫ হাজার ১৩ জন মডার্নার প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন। ২৪ নভেম্বর ২৮ জন পুরুষ ও ১৪ নারীসহ মোট ৪২, ২৩ নভেম্বর ২১ পুরুষ ও ১১ নারীসহ মোট ৩২, ২২ নভেম্বর ২৯ পুরুষ ও ৬ নারীসহ মোট ৩৫ জন টিকা পেয়েছেন। এর আগে ২১ নভেম্বর ১৬ পুরুষ ও ১৬ নারীসহ মোট ৩২ জন মডার্নার প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন। ২০ নভেম্বর ৭২১ পুরুষ ও ৭৪০ নারীসহ মোট ১ হাজার ৪৬১, ১৮ নভেম্বর ১ হাজার ২৬১ পুরুষ ও ৭৭৬ নারীসহ মোট ২ হাজার ৩৭, ১৭ নভেম্বর ২ হাজার ৬৯ পুরুষ ও ১ হাজার ৯৪ নারীসহ মোট ৩ হাজার ১৬৩, ১৬ নভেম্বর ১ হাজার ২৯৭ পুরুষ ও ৬৮৭ নারীসহ মোট ১ হাজার ৯৮৪, ১৫ নভেম্বর ১ হাজার ১১৮ পুরুষ ও ৭৯০ নারীসহ মোট ১ হাজার ৯০৮, ১৪ নভেম্বর ৭৯১ পুরুষ ও ৫৯৮ নারীসহ মোট ১ হাজার ৩৮৯, ১৩ নভেম্বর ৯৮৩ পুরুষ ও ৭১১ নারীসহ মোট ১ হাজার ৬৯৪ জন মডার্নার প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন।
গত ১০ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসারে, দেশে ১২ আগস্ট থেকে মডার্নার টিকার প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ থাকার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এখনও মডার্না টিকার প্রথম ডোজ দেয়া অব্যাহত আছেÑউল্লেখ করলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির প্রধান অধ্যাপক ডা. শামসুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘দ্বিতীয় ডোজের জন্য রাখা টিকা থেকেই এসব প্রথম ডোজ দেয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় ডোজের জন্য রাখা টিকার মধ্যে যেগুলোর মেয়াদ শেষের দিকে, সেগুলো প্রথম ডোজে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
এখন কারা মডার্নার প্রথম ডোজ পাচ্ছেনÑজানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
মডার্নার টিকা প্রথম ডোজ গত ১৪ আগস্ট থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত মোট কতজন পেয়েছেন? তাদের মধ্যে পুরুষ কতজন? নারী কতজন? প্রবাসী কতজন? কোন হাসপাতাল থেকে কত ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে? এ তথ্য চেয়ে ২৩ নভেম্বর শেয়ার বিজের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদুল কবীর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির প্রধান অধ্যাপক ডা. শামসুল হক, পরিচালক (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান ও ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) সহকারী প্রধান পরিসংখ্যান অফিসার রাজি উদ্দিনের ই-মেইল অ্যাড্রেসে মেইল করা হয়। কিন্তু গত শুক্রবার পর্যন্ত কোনো তথ্য সরবরাহ করা হয়নি।