গতকালের পর
স্ট্রোকের রোগীরা প্রায়ই ঠিকমতো খাবার খেতে বা গিলতে পারেন না, ফলে অপুষ্টির শিকার হন। তাঁদের জন্য বিশেষভাবে খাদ্য গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হতে পারে। কারও কারও এমনকি নাকে নল দিয়ে তরল খাবার দিতে হতে পারে। জোর করে খাবার খাওয়াতে গেলে ফুসফুসে খাবারের কণা চলে গিয়ে মারাত্মক অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া হতে পারে।
দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকার কারণে বেড শোর (চাপজনিত ঘা) যাতে না হয়, সেজন্য বিশেষ বিছানা এবং বারবার অবস্থান পরিবর্তন করা দরকার। এ ছাড়া পায়ের ধমনিতে রক্ত জমা বা ডিভিটি হয় কি না, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। অনেকে আবার প্রস্রাব-পায়খানার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাদের পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিতে হবে। কারও কারও ক্যাথেটার ব্যবহার করতে হয়।
পক্ষাঘাতগ্রস্ত হাত-পায়ের শক্তি ফিরিয়ে আনতে ফিজিওথেরাপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বাড়িতে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি করতে হবে। সন্ধির জড়তা কাটাতেও নিয়মিত ব্যায়াম দরকার। স্ট্রোকের পর পরিচর্যার অন্যতম লক্ষ্য হলো রোগীকে স্বাবলম্বী করে তোলা। সেই লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে। কথার জড়তা কাটাতেও ফিজিওথেরাপি গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসা চাই দ্রুত: স্ট্রোকের চিকিৎসা নির্ভর করে এর প্রকারভেদের ওপর। স্ট্রোক মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। মস্তিষ্কের রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়ে যে স্ট্রোক হয়, তাকে ইসকেমিক স্ট্রোক বলা হয়। আর মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে রক্ত মস্তিষ্কের ভেতর জমলে যে স্ট্রোক হয়, তাকে হেমোরেজিক স্ট্রোক বলা হয়। এই দুই ধরনের স্ট্রোকেরই আধুনিক চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত জমাট বেঁধে যে স্ট্রোক হয়, তার চিকিৎসায় বিশ্বব্যাপী স্ট্রোক থ্রম্বোলাইসিস আধুনিক ও জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা। এই প্রক্রিয়ায় একটি ওষুধ ব্যবহার করে মস্তিষ্কের জমাটবদ্ধ রক্ত গলিয়ে রক্ত চলাচল আবার স্বাভাবিক করা হয়। তবে এই চিকিৎসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সময়। স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা যাওয়ার চার ঘণ্টা ৩০ মিনিটের মধ্যে রোগীকে এই চিকিৎসা দিতে হয়। তার কারণ হলো মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে রক্ত চলাচল ব্যাহত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কোষগুলো নষ্ট হতে শুরু করে। তাই সময়মতো রক্ত চলাচল স্বাভাবিক না করা গেলে রোগীর মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ কোষগুলোকে বাঁচানোর সম্ভাবনা কমে যায়।
রোগীকে দ্রুততম সময়ে হাসপাতালে নিয়ে এলেও প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বিশেষত সিটি স্ক্যান ছাড়া চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয় না। তাই এই সময়টুকুও গুরুত্বপূর্ণ। এমন একটি হাসপাতালে নিতে হবে, যেখানে এ ধরনের পরীক্ষা ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা আছে। (শেষ)
ডা. এমএস জহিরুল হক চৌধুরী
ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ
ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা