স্মরণীয়-বরণীয়

বীর মুক্তিযোদ্ধা ডব্লিউ এএস ওডারল্যান্ড। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশ নেন। ওডারল্যান্ড ১৯১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ওডারল্যান্ড। তার পিতৃভূমি অস্ট্রেলিয়ায়। ১৯৩৪ সালে তিনি বাটা শু কোম্পানিতে সু-শাইনারের চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৩৬ সালে তিনি ওলন্দাজ জাতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৪০ সালে তিনি সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে ওলন্দাজ বাহিনীর গেরিলা কমান্ডো হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) অংশগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি নেদারল্যান্ডসের একজন রেডিও টেকনিশিয়ান, গোলা-বারুদ ও সমর বিশেষজ্ঞ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পান। ওডারল্যান্ড ১৯৭০ সালে বাটা শু কোম্পানির প্রডাকশন ম্যানেজার হিসেবে ঢাকায় আসেন। ১৯৭১ সালের ৫ মার্চ, মেঘনা টেক্সটাইল মিলের সামনে শ্রমিক-জনতার মিছিলে ইপিআরের সদস্যরা শ্রমিক জনতার ওপর গুলি চালায়। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত  নেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করবেন। বাটা শু কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তিনি পাকিস্তানি সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেন। একপর্যায়ে তিনি পাকিস্তানি সেনাদের গোপন পরিকল্পনাগুলো ২নং সেক্টরের ক্যাপ্টেন এটিএম হায়দারের কাছে পাঠানো শুরু করেন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে হত্যা-নির্যাতনের ছবি তুলে গোপনে পাঠাতেন বিদেশের গণমাধ্যমে। পরে  তিনি  বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। তিনি টঙ্গীর বাটা জুতার কারখানার ভেতরে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গড়ে তুলেন প্রশিক্ষণ শিবির। তাদের সেখানে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেন। পরে এই যোদ্ধাদের নিয়ে তিনি ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় গেরিলা যুদ্ধ চালান। তিনি টঙ্গীসহ সেক্টর ১ এবং সেক্টর ২-তেও গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলেন। যুদ্ধ পরিচালনার পাশাপাশি তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘বীর প্রতীক’  খেতাবে ভূষিত করে। তিনিই একমাত্র বিদেশি যিনি এই রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। ডব্লিউ এ এস ওডারল্যান্ড ১৯৭৮ সালে বাটা শু কোম্পানি থেকে অবসর নিয়ে ফিরে যান স্বদেশভূমি অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে ২০০১ সালের ১৮ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০