চুয়াডাঙ্গায় ১০ হাজার মেট্রিক টন তুলা উৎপাদন হবে

মফিজ জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা: চারা পদ্ধতিতে চুয়াডাঙ্গায় তুলা চাষ কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তুলার সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে কৃষকরা চাষ করছেন ডাল, পেঁয়াজ ও রসুনসহ নানা ধরনের সবজি। তুলা ছয় মাসের ফসল হওয়ায় একই সঙ্গে অন্য ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় কৃষকরাও আগ্রহী হচ্ছেন।

জেলায় হাইব্রিড জাতের তুলা চাষ করায় আগের তুলনায় বিঘায় ৮ থেকে ১০ মণ ফলন বেশি হচ্ছে। চার হাজার ৩৩২ হেক্টর জমি থেকে এ মৌসুমে জেলায় প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন তুলা ও বীজ উৎপাদন হবে। উৎপাদিত তুলার বাজার মূল্য প্রায় ৮৫ কোটি টাকা। দেশের বাজারে তুলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই আমদানি নির্ভরতা কমাতে দেশে হাইব্রিড জাতের তুলা চাষ, চারা তৈরি ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে তুলা উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।

চুয়াডাঙ্গা জোনে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে তুলা। এ জোন তুলা চাষের জন্য উপযুক্ত। কারণ এখানকার মাটি উর্বর ও জমি অন্য এলাকার চেয়ে উঁচু। এখানে উৎপাদিত তুলার রঙ ও গুণগত মান ভালো হওয়ায় চাহিদা অনেক। তুলার রঙ ধবধবে সাদা। বীজের গুণগত মান ভালো হওয়ায় তা সংরক্ষণ করা হয়।

দোআঁশ ও পলিযুক্ত মাটি এবং উঁচু জমি তুলা চাষে উপযোগী। বিঘায় হাইব্রিড জাতের বীজ লাগে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আর উফশি ওপি জাতের বীজ লাগে এক কেজি। বীজ বপনের আগে শুকনা মাটি অথবা ছাই দিয়ে ঘসে নিতে হয়। বীজ তলায় বীজ বপনের ১০ থেকে ১২ দিন পর মূল জমিতে চারা বপন করতে হয় ১৫ জুন থেকে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে। হাইব্রিড জাতের বীজ আগাম লাগাতে হয়। তুলার জমিতে জৈব সারের ব্যবহার বেশি চোখে পড়ে। জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে তৈরি করে নিতে হয়।  প্রতি বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনের জন্য প্রায় তিন হাজার চারা রোপণ করতে হয়। একটি তুলা গাছে ১০০ থেকে ২০০ ফল ধরে। কাঁচা অবস্থায় ফলের রঙ সবুজ দেখায়। শুধু পোকামাকড় দমনের জন্য কীটনাশক ব্যবহার হয়।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের উদ্ভাবিত ১৯টি সমভূমির তুলার জাতের মধ্যে ১৮টি উচ্চ ফলনশীল ও একটি হাইব্রিড জাতের। তুলা চাষে প্রতি বিঘা জমিতে আট থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। ১৫ থেকে ২০ মণ তুলা পাওয়া যায় বিঘায়। খরচ বাদে বিঘায় লাভ ৫১ থেকে ৬৮ হাজার টাকা হয় কৃষকদের। প্রতি মণ তুলার বর্তমান বাজার দর তিন হাজার ৪০০ টাকা।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেলগাছি গ্রামের তুলা কৃষক ইয়ামিন আলী বলেন, এ মৌসুমে পাঁচ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করছি। তুলা চাষে পরিচর্যা কম। সার ও কীটনাশকের ব্যবহারও তুলনামূলক কম। এক বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের তুলা চাষ করলে ১৫ থেকে ১৭ মণ তুলা পাওয়া যায়।

একই গ্রামের কৃষক মনজুর কাদির জানান, এখানের তুলা গাছ লম্বা ও সুন্দর হয়েছে। সাথী ফসলও ভালো হয়েছে।

আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া গ্রামের কৃষক ডিউক হুদা বলেন, এ বছর প্রথম তুলা চাষ করছি। ভুট্টা, ধান চাষে খরচ বেশি হওয়ায় হাইব্রিড জাতের তুলা চাষ করেছি। তুলা উন্নয়ন অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছি।

চুয়াডাঙ্গা জোনের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা শেখ আল মামুন বলেন, উন্নত জাতের তুলা বীজ ব্যবহার করছি। চারা করে তুলার আবাদ হচ্ছে। ৮ থেকে ১০ হাজার কৃষক তুলা চাষ করছেন এ জোনে। এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়। দেশের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ায় বেশি তুলা চাষ হচ্ছে।

বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান জানান, তুলা চাষের জন্য এ এলাকা উপযোগী। তুলা ক্রেতারা প্রথম থেকে তিন হাজার ৪০০ টাকা দাম দিয়েছে। তুলা দেশে একই দামে বিক্রি হয়। বাজারদর ভালো থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন।

তিনি বলেন, আমদানি নির্ভরতা কমাতে কাজ করছি। দেশের সব জেলায় তুলা চাষের উদ্যোগ নিচ্ছি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০