দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের পাঁচটি উপজেলায় হঠাৎ ভারী বৃষ্টিতে শীতকালীন সবজি, আমন, স্ট্রবেরি ও রবি শষ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে ইরি বোরোর বীজতলা ও ফসলে পচন ধরে বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। প্রায় ১৫০০ হেক্টর জমির আমন পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে দিশেহারা কৃষকরা। এছাড়া চাষকৃত রবি শস্য ও শীতকালীন সবজির অর্ধেকের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গোপালগঞ্জের ধানী জমিসহ সব ফসলের মাঠে এখন পানি আর পানি। গত শনিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত চার দিন ও বৃহস্পতিবার দিন ও রাতে বৃষ্টি হওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে আনুমানিক ৫০ কোটি টাকার ক্ষতিতে পড়েছে গোপালগঞ্জের কৃষকরা।
সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের দিলিপ বালা বলেন, এবার ধানের ভালো ফলন হয়েছিল। কিন্তু কৃষকরা সব ধান কেটে ঘরে তুলতে পারেননি। জমির ধান এখনও পানির নিচে। শখ করে অনেক টাকা খরচ করে স্ট্রবেরি চাষ করেছিলাম তাও পানির নিচে।
মুকসুদপুর উপজেলার উজানী ইউনিয়নের খালকুলা গ্রামের পরিমল মণ্ডল জানান, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বীজতলা, রবিশষ্য ও শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নিঃস্ব হওয়ার পথে কৃষকরা।
কোটালীপাড়ার কৃষক ওসমান শেখ বলেন, বৃষ্টিতে বোরোর বীজ তলা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। কাশিয়ানি উপজেলার জলিরপাড়ের কৃষক পঙ্কজ তালুকদার বলেন, বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি প্রণোদনার প্রয়োজন।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কাজী রাকিব জোবায়ের জানান, চলতি মৌসুমে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ হয়েছিল। ধানের ফলনও ভালো হয়েছিল কিন্তু কৃষক সম্পূর্ণ ধান ঘরে উঠাতে পারেনি। অসময়ের বৃষ্টিতে মাঠ জলাবদ্ধ থাকায় বর্তমানে প্রায় ৫০০ হেক্টর ধান পানির নিচে রয়েছে। ২০৫ হেক্টর জমির বোরো বীজতলা নষ্ট হয়েছে। এতে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া উৎপাদিত খেসারি, মসুর, মোটর, সবজি, গম, পেঁয়াজ, রসুন, সরষে, গোল আলু, মিষ্টি আলু, সূর্যমুখী, মাষকলাই, ভুট্রা ও ধনিয়া ৬০ শতাংশ নষ্ট হয়েছে। এতে সব মিলিয়ে উপজেলার কৃষকদের আনুমানিক প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, অনাকাক্সিক্ষত বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত প্রায় ৫০ শতাংশ রবিশষ্য ও শীতকালীন সবজির
ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া সম্পূর্ণ ধান কেটে ঘরে নিতে পারেনি কৃষক। অনেক জমির ধান ও বোরো বীজতলা
পানিতে তালিয়ে গেছে। কৃষকরা পানি সরাতে কাজ করছেন। হটাৎ বৃষ্টিতে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটা পুষিয়ে নেয়া কৃষকদের জন্য কঠিন হবে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষি অফিস থেকে অন্য ফসল আবাদ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানানো হয়েছে। সরকার প্রণোদনা দিলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা উপকৃত হবেন। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।