শেষ বয়সে মা-বাবা কেন থাকবেন বৃদ্ধাশ্রমে

পৃথিবীতে সবাই তোমাকে ভালোবাসবে, সেই ভালোবাসার মাঝে যে কোনো প্রয়োজন লুকিয়ে থাকে। কিন্তু দুজন ব্যক্তি কোনো প্রয়োজন ছাড়াই তোমাকে ভালোবাসবেনÑতারা হলেন মা-বাবা। আমি মনে করি, একজন মানুষের জন্য মা-বাবা হলো সৃষ্টিকর্তার দেয়া সেরা উপহার। পৃথিবীতে মা-বাবা শব্দটা মায়া, মমতা ও স্নেহ ঘেরা স্বর্গীয় ভালোবাসার দুটি শব্দ। মা-বাবার ভালোবাসায় নেই কোনো পরিমাপ, নেই কোনো তুলনা। মা-বাবার ভালোবাসায় নেই কোনো লোক দেখানো  কৃত্রিমতা। সন্তানের জন্য নেই ‘নামক’ কোনো শব্দই নেই। সন্তান যখন যা চায়, তাই দেয়ার শতভাগ চেষ্টা করেন মা-বাবা। পৃথিবীতে একজন মানুষের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হলেন মা-বাবা। জীবনের শত প্রতিকূলতার মাঝেও নিজের সন্তানকে আগলে রাখেন পরম যত্নে। প্রত্যেক সন্তান বেড়ে ওঠার পেছনে মা-বাবা তাদের শ্রম, মেধা, অর্থ সবকিছুই ব্যয় করেন। সন্তানের জšে§র পরপরই মা-বাবা তাদের নিজেদের স্বপ্নগুলো সন্তানদের মাঝে লালন করতে থাকেন। নিজেদের জীবন সঁপে দিয়ে উদ্যমী হয়ে ওঠেন সন্তার জীবন গড়ার জন্য।     

সৃষ্টিকর্তার পর যাদের কাছে আমরা চিরঋণী, চিরকৃতজ্ঞ তারা হলেন মা-বাবা। তাদের ছাড়া আমাদের অস্তিত্বই সৃষ্টি হতো না। তাদের যতœ আর ভালোবাসা না পেলে আমরা মানুষ হতাম না। বর্তমান সন্তানরা তাদের মা-বাবাকে সেই ভালোবাসা ও সম্মানটা দিতে পারে না যেটা তাদের দেয়া উচিত। মমতাময়ী মায়ের আঁচলে বড় হওয়া ছেলেমেয়েগুলো ভুলে যায় মা না থাকলে তার কী হতো। যে মা-বাবা এক সময় নিজে না খেয়েও সন্তানের মুখে তুলে খাইয়ে দিতেন, সেই মা-বাবাকে রেখে আসেন বৃদ্ধাশ্রমে। তারা আজ কোথায় আছেন, কেমন আছেন, তাদের খোঁজখবর নেয়ার সময় তাদের নেই। তার নিজের সন্তানও হয়তো একদিন তার সঙ্গে এমন আচরণই করবে। বিভিন্ন উৎসবে, যেমন ঈদের দিনেও যখন তারা তাদের সন্তানদের কাছে পান না, সন্তানের কাছ থেকে একটি ফোনও পান না, তখন অনেকেই নীরবে অশ্রুপাত করেন আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। আজ তোমরা চাকরি করছ, ব্যবসা করছ, প্রতিষ্ঠিত হচ্ছ, সুনাম কুড়াচ্ছ। তারপর বিয়ে করে নতুন সংসার নিয়ে আলাদাভাবে থাকছ। অন্যদিকে বৃদ্ধ মা-বাবা কী করছেন, কী খাচ্ছে, কোন জটিল ও কঠিন রোগে ভুগছেন সেদিকে বিন্দুমাত্র কোনো খেয়াল নেই তোমাদের।

বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবা আবার ঠিক শিশুকালের মতোই ওয়ে ওঠেন। কেননা মানুষ যখন একদম প্রাপ্ত বয়স্ক থেকে ক্রমে বৃদ্ধ বয়সে প্রবেশ করেন, ঠিক তখনই ক্রমে ক্রমে তার ভেতরে শিশুসুলভ নানা আচরণ লক্ষ করা যায়। যে সময়টায় তাদের অনেক যত্ন ও খোঁজখবর নেয়ার প্রয়োজন হয়। শিশুরা যেমন মানুষের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করে। একাকিত্ব জীবন পছন্দ করে না, ঠিক বৃদ্ধরাও সেটাই বোধ করেন। যে বয়সে ঠিক শিশুদের মতোই অসহায়ত্ব বোধ করেন। যে সময়টাতে তাদের একটু কথাবার্তা বলার মতো সঙ্গী-সাথি দরকার, সেই সময় যদি তাকে সবার থেকে ছিটকে পড়তে হয়, তাহলে তাদের মনের অবস্থাটা কেমন হতে পারে। তাই তাদের নিরাশার আঁধারের ভেতরে ঠেলে না দিয়ে কাছে টেনে নিলে তাদের কত না আত্মতৃপ্তি লাগে।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। আমরাও একসময় শিশু ছিলাম। আমরা তো কখনও তাদের কাছে বোঝা হয়েছিলাম না। মনে রাখা সমীচীন যে, আমরাও একদিন বৃদ্ধ হবো। আমরা যদি আমাদের বৃদ্ধ মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসি অথবা তাদের অবহেলা করি আমাদের সন্তানরাও হয়তো একদিন আমাদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসবে এবং আমাদের সঙ্গে এরকম আচরণই করবে। সুতরাং আমাদের উচিত বৃদ্ধ মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রম নয়, অবহেলা নয়, তাচ্ছিল্য নয়। কাছে তারা যেমনটি করেছিলেন। অতএব, বৃদ্ধাশ্রম নয়, মনের মণিকোঠায় হোক মা-বাবার শেষ আশ্রয়স্থল।

ইমরান হোসাইন

শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০