নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সততা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, আপনারা দেশপ্রেম, সততা ও শৃঙ্খলা নিয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন। একটি কথা সব সময় মনে রাখতে হবে, শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড শৃঙ্খলাবাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। কখনও শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাবেন না, আপনাদের নিজেদেরই ক্ষতি হবে।’
গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বিজিবি দিবসের অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বিজিবির সব সদস্যকে ‘চেইন অব কমান্ড’ মেনে দায়িত্ব পালনেরও নির্দেশ দেন সরকারপ্রধান।
বিজিবির সব সদস্যকে ‘চেইন অব কমান্ড’ মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের আদেশ মেনে চলা প্রতিটি শৃঙ্খলাবাহিনীর অবশ্য কর্তব্য।’ সীমান্তরক্ষা বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বিজিবি এখন জল, স্থল ও আকাশপথে দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা অর্জন করেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “নিñিদ্র নজরদারি ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে ‘স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড ট্যাকটিকাল রেসপন্স সিস্টেম’ স্থাপন ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে।”
আওয়ামী লীগ সরকার বিজিবিতে নারী সদস্যদের অংশ নেয়াও নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিজিবিতে মোট ৮১৮ নারী সৈনিক নেয়া হয়েছে।’
ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে এরই মধ্যে চারটি ব্যাটালিয়ন ও সুন্দরবন এলাকায় দুটি ভাসমান বিওপিসহ মোট ৬২টি বিওপি খোলার মাধ্যমে সীমান্ত নজরদারির আওতা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ২৪২টি নতুন বিওপি সৃষ্টি ও ১২৬টি বিওপি সীমান্তের কাছে স্থানান্তরের কার্যক্রম চলছে বলে অনুষ্ঠানে তথ্য দেন প্রধানমন্ত্রী।
পেশাদার বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘চট্টগ্রামের বায়তুল ইজ্জতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের একটিমাত্র ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ ছিল এতদিন। সরকার চুয়াডাঙ্গায় নতুন একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ করার উদ্যোগ নিয়েছে।’
নানা সীমাবদ্ধতার পরও সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষাসহ চোরাচালান, মাদক পাচার ও নারী-শিশু পাচার রোধে বিজিবির ‘সফলতার’ প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে বিজিবির অভিযানে প্রায় ৮৫০ কোটি টাকার মাদক এবং ৬০০ কোটি টাকার বিভিন্ন চোরাচালানের মালামাল আটক করা সম্ভব হয়েছে।’
বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সীমান্তে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনকে সহায়তা করাও আপনাদের অন্যতম দায়িত্ব। সংসদীয় নির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং বিভিন্ন সময়ে উদ্ভূত বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও দেশ গঠনমূলক কাজে আপনাদের ভূমিকা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদস্যদের কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন। কুচকাওয়াজ থেকে তাকে অভিবাদন জানানো হয়।
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ‘রোল মডেলে’ পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, তথ্য-প্রযুক্তি ও কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে উন্নীত করেছিলেন। সে তথ্য তুলে ধরে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে উন্নয়নের কর্মধারা অব্যাহত রাখায় আজকে আমরা ২০২১ সালে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমাদের আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’
বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা লক্ষ্যস্থির করেছি, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবে। তাছাড়া বাংলাদেশ একটি ব-দ্বীপ। এই ব-দ্বীপটিকে আরও উন্নতমানের করে তৈরি করার জন্য এবং আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন একটি সুন্দর জীবন পায়, সেই লক্ষ্য রেখে আমরা ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি। আগামী প্রজšে§র জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, আত্মমর্যাদাশীল, উন্নত ও সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, জাতির পিতার প্রত্যাশিত আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে এবং বাংলাদেশের মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে সীমান্তের অতন্দ প্রহরী হিসেবে তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে।’
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান অনুষ্ঠানে বিজিবি সদস্যদের বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পদক বিতরণ করেন। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলামও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী পরে বিজিবি সদর দপ্তরে বিজিবি সম্মেলন কেন্দ উদ্বোধন করেন।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের দরবার হল থেকে বিদ্রোহ হয়। নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে পরদিন ঘটে এর অবসান। ওই ঘটনায় নিহত হন ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। রক্তাক্ত সেই বিদ্রোহের পর সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকে। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।
বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোর ক্ষেত্রে ১২টি আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি), ১০টি রায়ট কন্ট্রোল ভেহিকল, ২৪৭টির অল টেরেইন ভেহিকল (এটিভি), উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিভিন্ন সিরিজের ১২টি হাইস্পিড বোট, দুটি ভেহিকল এক্সরে স্ক্যানার মেশিন কেনা হয়েছে। এছাড়া ১৪টি আধুনিক ও যুগোপযোগী ‘অ্যান্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন্স সিস্টেম’ সংগ্রহ করা হয়েছে।