হামিদুর রহমান: রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা। আর মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ যাত্রী ও যাত্রীর স্বজনসহ বিমানবন্দরের কর্মীরা। এয়ারপোর্টে নেমেই বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন বিদেশি যাত্রীরা। একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মশার এমন আধিক্য দেখে সবাই বিব্রত, যা উত্তর সিটি করপোরেশনের লজ্জা।
অন্যান্য দেশ থেকে যারা প্রথমবার বাংলাদেশে আসছেন, এয়ারপোর্টে নেমেই তারা হতাশ হচ্ছেন। পত্রপত্রিকার বাংলাদেশের সঙ্গে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরকে তারা মেলাতে পারছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিমানবন্দরে নিয়মিত মশা নিধনের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ দেয়া হয় না। ফলে এটি একটি মশার প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। মশামুক্ত করতে না পারায় এয়ারপোর্টের সার্বিক পরিবেশ একটি জাতীয় লজ্জায় পরিণত হয়েছে বলে মনে করছেন যাত্রীসাধারণ।
গত শুক্রবার যুক্তরাজ্য থেকে ছয় বছর পর দেশে বেড়াতে এসেছেন আলমগীর কবীর। তার সঙ্গে তার স্ত্রী ও তিন সন্তান। বিকালে এমিরেটসের একটি উড়োজাহাজে তিনি সন্তানসহ বিমানবন্দরে নেমেই লজ্জায় পড়েন। তার এক সন্তানের বয়স ছয় বছর। এটা তার প্রথম বাংলাদেশ ভ্রমণ। বিমানবন্দরে অবতরণের পর টার্মিনালে নেমে গাড়িতে ওঠার আগে সে দেখতে পায় ঝাঁকে ঝাঁকে মশা ঢুকে পড়েছে। এটা তাকে হতবাক করেছে। এতে লজ্জা পেয়েছেন তার বাবা-মাও।
আলমগীর কবির বলেন, ‘একটি দেশের আয়না হলো তার বিমানবন্দর। আমাদের দেশে বিমানবন্দরের এত বেহাল অবস্থা! এটি কীভাবে সম্ভব?’
গত সোমবার বিমানবন্দরে নেমে এক বিদেশি যাত্রী মশার ভিডিও করেন। ডেভিড নামের ওই যাত্রীর এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি খুব মজাদার! তোমরা মশাপ্রিয় শান্ত জাতি মনে হয়। তা না হলে এয়ারপোর্টে মশা থাকে কীভাবে?’
নানা পদক্ষেপ নেয়ার পরেও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মশার উপদ্রব কমেনি। সন্ধ্যার অন্ধকারের সঙ্গেই যেন যুক্ত হয় মশার আতঙ্ক। যাত্রীসহ বিমানবন্দরে আসা হাজার হাজার মানুষ পড়েন মশার বিড়ম্বনায়। তবে মশা নিয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন একে ওপরের দোষারোপ করলেও এরই মধ্যে নেয়া হয়েছে বেশকিছু পদক্ষেপ। এতে টার্মিনালের ভেতরে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে এলেও টার্মিনালের বাইরের মশারা আছে বহাল তবিয়তে। এই ভোগান্তিতে সবচেয়ে বেশি আছেন বিমানবন্দরের বে-এরিয়ায় কর্মরত বিমানবন্দরের বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা।
উল্লেখ্য, এর আগেও বিমানবন্দরে মশা নিধনে পাল্টাপাল্টি দায় চাপিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বাইরের এলাকা থেকে মশা আসছেÑএমন অভিযোগ তুলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে দোষ চাপায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে বিমানবন্দরে পরিচ্ছন্নতার অভাব, মশার প্রজনন ক্ষেত্র আছে এমন অভিযোগ করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে পাল্টা দোষ দিচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। মশার কারণে বিগত সময়ে ফ্লাইট বিলম্বের ঘটনাও ঘটেছে। মশা নিয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন একে ওপরের ওপর দোষারোপ করলেও এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, প্রতিবছরই মশার উৎপাতে ভোগান্তির মধ্যে পড়েন যাত্রী ও তাদের স্বজনরা। শুধু তাই নয়, বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভোগেন মশার উৎপাতে। বিশেষ করে টার্মিনাল ভবনের বাইরে মশার উৎপাত বেশি। ফলে বাইরে দায়িত্বরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মী, অপেক্ষমাণ যাত্রী ও তাদের স্বজনদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। খোলা স্থানে অতিরিক্ত মশা থাকায় কখনও কখনও উড়োজাহাজের ভেতরে ঢুকে পড়ে মশা। সেই মশা তাড়াতে বিপাকে পড়তে হয় এয়ারলাইনস কর্মীদের।
বিমানবন্দরে কর্মরতরা বলছেন, নভেম্বর থেকে বিমানবন্দরে মশার উৎপাত বাড়ে, শীতকালে মশার উপদ্রব থাকে সবচেয়ে বেশি। এই সময়ে দিনের বেলায়ও মশার কামড় সহ্য করতে হয়। শীত কমতে থাকলে মশার উপদ্রবও কমে। বর্ষার মৌসুমে সহনীয় হয় মশার উৎপাত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশেনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, গত বছর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মশা নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করা হয়। ডিএনসিসি’র পক্ষ থেকে প্রতিদিন লার্ভিসাইড, ম্যালেরিয়া অয়েল বি এবং ফগার মেশিনের সাহায্যে অ্যাডাল্টিসাইড ছেটানো হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে মশা নিধনে কাজ করছি। পুরোপুরি মশা নিধনে আমরা নতুন কিছু কেমিক্যাল ও প্রযুক্তি অ্যাড করব। তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ভেহিকল মাউনটেড ফগার মেশিনে অল্প সময়ে বিমানবন্দরে পুরো এলাকায় ওষুধ ছেটানো সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া আমরা তাদের মশার উৎপত্তি স্থল?গুলো চিহ্নিত করেছি। ফলে সামগ্রিকভাবে মশার উপদ্রব কমছে। তবে বিমানবন্দরের ভেতর ও বাইরের জলাশয়গুলো সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে, তা না হলে মশার বংশবৃদ্ধি হবে, উপদ্রব ছড়িয়ে পড়বে।’
