কথাসাহিত্যিক ও সম্পাদক সরদার জয়েনউদ্দীনের আজ ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯১৮ সালে পাবনার সুজানগর উপজেলার কামারহাটিতে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম মুহম্মদ জয়েনউদ্দীন বিশ্বাস। তিনি বাংলাদেশে বইমেলার প্রবর্তক। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৬৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও আদমজী সাহিত্য পুরস্কার এবং ১৯৯৪ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। সরদার জয়েনউদ্দীন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে আইএ পড়ার সময় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি এই চাকরি ছেড়ে দেন। ১৯৪৮ সালে তিনি পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকার বিজ্ঞাপন বিভাগে যোগ দেন। পরে দৈনিক সংবাদ ও দৈনিক ইত্তেফাকে কাজ করেন । ১৯৫৫-৫৬ সালে তিনি শিশু-কিশোর ম্যাগাজিন ‘সেতারা’ ও ‘শাহীন’-এর সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে তিনি বাংলা একাডেমির সহকারী প্রকাশনা কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেন। ১৯৬৪ সালে বর্তমান জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান এবং পরে পরিচালক হন। ১৯৬৫ সালে তিনি সেন্ট্রাল পাবলিক লাইব্রেরিতে (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার) শিশু গ্রন্থমেলার আয়োজন করেন। এটাই ছিল বাংলাদেশের গ্রন্থমেলার সূচনা। ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জে আরেকটি গ্রন্থমেলার আয়োজন করেন। পরে তিনি বাংলাদেশ টেক্সট বুক বোর্ডের ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ পদে যোগ দেন। ১৯৮০ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কথাশিল্পী সরদার জয়েনউদ্দীনের প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘নয়ান ঢুলি’ ১৯৫২ সালে প্রকাশিত হয়। তার অন্যান্য গল্পগ্রন্থ ‘বীর কণ্ঠীর বিয়ে’, ‘খরস্রোত’, ‘বেলা ব্যানার্জীর প্রেম’ ও ‘অষ্টপ্রহর’। উপন্যাসের মধ্যে ‘নীল রং রক্ত’, ‘অনেক সূর্যের আশা’, ‘বেগম শেফালী মির্জা’ ও ‘বিধ্বস্ত রোদের ঢেউ’ উল্লেখযোগ্য। তিনি ‘উল্টো রাজার দেশ’ ও ‘অবাক অভিযান’ নামে দুটি শিশুতোষ গ্রন্থও রচনা করেন। তার রচনায় গণমানুষের কল্যাণ ও মুক্তিচিন্তার পাশাপাশি সমকালীন সমাজ ও রাজনীতিবিষয়ক ঘটনাবলিও প্রাধান্য পেয়েছে। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং কথাসাহিত্যে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৬ সালের ২১ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা