প্রতিনিধি, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর): দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে সম্প্রতি মাত্রাতিরিক্ত সিসা বিষক্রিয়ায় অন্তত ৩৫টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। গরু মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত কমিটির গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ওই এলাকার ২০০ বিঘা জমির ফসল নিয়ে। চলতি সপ্তাহে ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুদেবপুর ও বেতদিঘী ইউনিয়নের মহেষপুর গ্রামে গত মাসে ৩৫টি গরুর মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার গবেষণাগারের প্রতিবেদনে ওই এলাকায় খড় ও ঘাসে মাত্রাতিরিক্ত সিসার বিষক্রিয়ায় গরুর মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত হয়।
গবেষণাগারের চিপ-সায়েন্টিফিক অফিসার ডাক্তার রামমোহন অধিকারী স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, আলাদিপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুদেপুর মাঠে অস্থায়ীভাবে গড়ে উঠা একটি ব্যাটারি কারখানা-সংলগ্ন প্রায় ২০০ বিঘা জমির খড় ও ঘাষে ৩০ হাজার পিপিএম সিসা রয়েছে। এছাড়া মাটিতে রয়েছে পাঁচ হাজার পিপিএম। ওই এলাকার মাত্রাতিরিক্ত সিসা মিশানো খড় ও ঘাস খেয়ে গরুগুলোর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার আহসান হাবিব।
তিনি বলেন, গবেষণাগারের প্রতিবেদন পাওয়ায় সেই এলাকায় মাইকিং করে কৃষকদের সতর্ক করা হয়েছে এবং সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে সাইবোড দেয়া হয়েছে।
এদিকে সিসা বিষ শুধু গরুর নয়, মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে উল্লেখ্য করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এ সিসার বিষ মানবদেহে যাওয়ার পর, মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। এ জন্য বিষের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
গতকাল বুধবার দক্ষিণ বাসুদেবপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের মধ্যে খড় থাকলেও, মাঠের ধান কৃষকরা ঘরে তুলেছে, এদের মধ্যে অনেকে সেই ধান বাজারে বিক্রিও করেছে। আবার কেউ কেউ ধান মাড়াইয়ের পর ধানের খড় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য পৃথকভাবে রেখেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই মাঠে ধান চাষিরা অধিকাংশ প্রান্তিক চাষি, তারা বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেছে, এ জন্য ধান বিক্রি করে সেই ঋণ পরিশোধ করেছে।
গ্রামের কৃষক মুকুল বলেন, তিনি চার বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন, সেই ধান সবেই বিক্রি করে দিয়েছেন। একই গ্রামের মফিজউদ্দিন বলেন তিনি অন্যর জমিতে ১০ কাঠা জমিতে বর্গাচাষি হিসেবে ধান চাষ করেছিলেন। বর্গাচাষি বেলায়েত হোসেন বলেন, তিনি তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন, ধান ও খড় পৃথক রেখেছেন।
বিষযুক্ত এলাকার ধান বাজারে বিক্রি করে দেয়ায় এ সিসা বিষের আতঙ্ক এখন সারা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, সিসা বিষ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। যে ধানের খড় খেয়ে গরুর মৃত্যু হয়েছে, সেই ধানের চাল মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হবে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বিষযুক্ত এলাকার ধান ও খড় ব্যবহার ও বিক্রি না করার জন্য এলাকাবাসীকে সতর্ক করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিষের মাত্রা নির্ণয়ের জন্য ধানের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, ধানের পরীক্ষাগারের ফলাফল হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।