নিজস্ব প্রতিবেদক: চুল-দাড়ি আর ভ্রু কেটে নিজের আসল পরিচয় আড়াল করতে চেয়েছিলো কক্সবাজারে নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রধান আসামী আশিকুল ইসলাম আশিক (২৯) ওরফে টর্নেডো আশিক। কিন্তু তারপরও তার শেষ রক্ষা হয়নি। মাদারীপুর থেকে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয় সে। আশিক কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ার বাসিন্দা। স্থানীয়ভাবে সে ‘টর্নেডো আশিক’ নামে পরিচিত।
সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘নারী পর্যটককে ধর্ষণের পর থেকে আশিক প্রথমে দুই দিন কক্সবাজারে আত্মগোপনে ছিলেন। এরপর তিনি বুঝতে পারেন তাকে যেকোনো সময় গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এরপর পটুয়াখালীতে আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে একটি এসি মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঢাকা আসে সে। পরে ঢাকা থেকে মাদারীপুর হয়ে পটুয়াখালী যাবার পথে মাদারীপুরের একটি বাসস্ট্যান্ড থেকে আশিককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় র্যাব। র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব- ৮ এর আভিযানিক দল, ও র্যাব-১৫ এর একটি দল এই অভিযান পরিচালনা করে।’
আল মঈন বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি ভুক্তভোগী ওই নারীর ৮ মাসের একটি সন্তান রয়েছে। আর সেই সন্তানের হার্টে ছিদ্র থাকায় সেটির চিকিৎসার জন্য বিপুল পরিমান অর্থের প্রয়োজন। আর সেজন্য তিনি কক্সবাজারে সৈকতে টুরিষ্টদের কাছে সাহায্য চেয়ে বেড়াতেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আশিক ওই নারীর সন্তান অসুস্থের বিষয়টি স্বীকার করে আমাদের জানায়, ভুক্তভোগী ওই নারীর সাথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের আগের দিন তার দেখা হয়। এসময় ওই নারীর কাছে তার সন্ত্রাসী চক্র মেইনটেইন্স করা বাবদ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে সে। আর ওই নারীর স্বামী চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে পরদিন ২২ ডিসেম্বর এই ধর্ষণ ঘটনা ঘটায়।’

তিনি বলেন, ‘২০১২ সালে প্রথম সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরু করে আশিক। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে সে অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে ধরা পরে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, ধর্ষণ, মাদক, নারী নির্যাতন সহ বিভিন্ন অপরাধমলূক ১২টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় সে ৫টিতে গ্রেপ্তার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদী কারাবরণ করেছে। সবশেষ সে আড়াই বছর জেল থাকার পর কয়েকদিন আগে বের হয়।’
খন্দকার আল মুঈন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আশিক এই ধর্ষণের ব্যাপারে স্বীকারোক্তিমূলক তথ্য দিয়েছে। আরও স্বীকার করেছে, পর্যটন নগরী কক্সবাজারের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মূল হোতা সে। তার একটি চক্র রয়েছে, এই চক্রে ৩০-৩২ জন সদস্য রয়েছে। কক্সবাজারে পর্যযটন এলাকাতে চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ, মাদক সহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করাই ছিলো তার চক্রের মূল কাজ। বিভিন্ন হোটেলের ম্যানেজারদের সাথে মিলে পর্যটকদের সুযোগ বুঝে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করতো সে।’
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘আশিক কক্সবাজারের সুগন্ধা এলাকায় বিভিন্ন ফ্ল্যাট মালিকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। পরে সেখানে অনৈতিক কাজ সহ অন্যদের কাছে দ্বিগুন বা তিনগুন টাকায় ভাড়া দিয়ে থাকে। সে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের হোটেল মোটেল এলাকায় বিভিন্ন সময় সুযোগ বুঝে ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করতো। পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতো। এমনকি আইনশৃংক্ষলা রক্ষাকারী এক পুলিশ সদস্যকেও ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায়ের কথা স্বীকার করেছে আশিক।’
উল্লেখ, গত বুধবার পর্যটন নগরী কক্সবাজারে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণের অভিযোগ তোলা নারী জানিয়েছিলেন, স্বামী-সন্তান নিয়ে বুধবার সকালে তারা ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছান। এরপর শহরের হলিডে মোড়ের সি ল্যান্ড হোটেলের ২০১ নম্বর কক্ষ ভাড়া নেন। বিকেলে সৈকতে গেলে সাড়ে ৫টার দিকে তার স্বামীর সঙ্গে এক যুবকের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এর জের ধরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার কিছু পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার আট মাসের সন্তান ও স্বামীকে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। আর তাকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় জোর করে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
ওই নারীর অভিযোগ, তাকে শহরের একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানে নিয়ে প্রথমে তিনজন ধর্ষণ করেন। তারপর নেয়া হয় হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামের একটি হোটেলে। সেখানে আবারও তাকে ধর্ষণ করেন একজন।
এই ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই নারীর স্বামী চার জনের নাম উল্লেখ ও তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন।