শেয়ারবিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এক বাংলাদেশি কূটনীতিককে গ্রেফতার করেছে সে দেশের পুলিশ। শ্রমিক পাচার, গৃহকর্মীকে নির্যাতন এবং মজুরি চাওয়ায় হত্যার হুমকির অভিযোগে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের ডেপুটি কনসাল জেনারেল শাহেদুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানানো হয়। খবর: বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম।
বাংলাদেশের ওই কূটনীতিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিউইয়র্কে তার বাসায় এক বাংলাদেশি নাগরিককে তিন বছরের বেশি সময় ধরে সহিংস নির্যাতন ও হুমকি দিয়ে বিনা বেতনে কাজ করতে বাধ্য করেছেন তিনি। গৃহের কাজে সহায়তার জন্য মো. আমিন নামের এক ব্যক্তিকে ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্কে নেন শাহেদুল। যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরই আমিনের পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হয়। আমিনকে দিয়ে দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করানো হতো। তাকে কোনো মজুরি দেওয়া হতো না। তাকে হুমকি দেওয়া হতো। তিনি মারধরেরও শিকার হয়েছেন। ২০১৬ সালে শাহেদুলের বাসা থেকে আমিন পালিয়ে যান।
এ অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার সকালে নিউইয়র্কের পুলিশ তাকে নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করার কয়েক ঘণ্টা পর শাহেদুলকে কুইন্স সুপ্রিমকোর্টে হাজির করা হয়। বিচারক ড্যানিয়েল লুইস ৫০ হাজার ডলারের বন্ড বা নগদ ২৫ হাজার ডলারে তার জামিন ঠিক করে দেন এবং তার পাসপোর্ট জব্দ করার নির্দেশ দেন বলে কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি রিচার্ড ব্রাউন জানান।
অ্যাটর্নি রিচার্ড এ ব্রাউন এক বিবৃতিতে বলেন, এ ধরনের অভিযোগ অত্যন্ত উদ্বেগজনক। একজন কনস্যুলার তার বাড়িতে আরেকজনকে কাজে বাধ্য করতে শারীরিক জোর খাটিয়েছেন ও হুমকি দিয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রথম দিন থেকেই ওই কর্মীকে কাজে আটকে রাখার জন্য তার পাসপোর্ট নিয়ে নিয়েছেন। তাকে বেতন দিতে অস্বীকার করেছেন এবং অন্য দেশে থাকা তার পরিবারকে বিপদে ফেলার ভয়-ভীতি দেখান। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে নিশ্চিতভাবেই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তার জন্য শাস্তি পেতে হবে।
ব্রাউন আরও বলেন, মজুরি দাবি করলেই আমিনকে মারধর করা হতো। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে কাজ ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে আমিনকে হত্যার হুমকি, এমনকি বাংলাদেশে তার বৃদ্ধ মা ও ছেলেমেয়েকেও হত্যার হুমকি দেন। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে গত বছরের মে মাসে আমিন পালিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিচার চায়।
শাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে ১৫ বছরের জেল খাটতে হতে পারে। কনস্যুলেট কর্মকর্তারা বলছেন, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টায় রয়েছেন আইনি পদক্ষেপ মোকাবিলার জন্য। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান জানান, তারা মনে করেন অভিযোগকারী ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের আশায় এ ধরনের অভিযোগ করেছেন, যা সত্য নয়।
উল্লেখ্য যে, একই ধরনের অভিযোগে এর আগে ২০১৪ সালের মার্চে নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলার নোটিস দেওয়ার পর্যায়েই তিনি নিউইয়র্ক ছাড়েন। মামলাটি এখনও ঝুলে থাকলেও তার গৃহকর্মী মাসুদ পারভেজ গ্রিন কার্ড পেয়েছে।
Add Comment