মো. আসাদুজ্জামান নূর:সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে গতকাল ইতিবাচক ধারায় লেনদেন হয়েছে পুঁজিবাজারে। বেশ লম্বা সময় পরে গতকাল শেয়ার কেনায় আগ্রহী ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে ক্রয়চাপে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন ও সিংহভাগ সিকিউরিটিজের শেয়ারদর বাড়তে দেখা গেছে, যার কারণে সূচক বেড়েছে ২৯ পয়েন্ট।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বছর শেষে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিক্রয় চাপ শেষ হয়েছে। মুনাফা সংগ্রহের পর অর্থবছরের হিসাবনিকাশ শেষে তারা আবার শেয়ার কেনা শুরু করেছে। সেইসঙ্গে নিষ্ক্রিয় বসে থাকা ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীরাও সক্রিয় হতে শুরু করেছে বলেই ক্রয়চাপ বেড়েছে।
গতকাল লেনদেনে চাঙা ভাব দেখা গেছে। ১৩ কর্মদিবস পর লেনদেন ছাড়াল এক হাজার কোটি টাকার ঘর। গত ৭ ডিসেম্বর পুঁজিবাজার নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পরে এত বেশি লেনদেন দেখা যায়নি। গতকাল সোমবার ডিএসইতে টাকার অঙ্কে এক হাজার ৩১৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছিল ৮৯৪ কোটি ১৭ লাখ টাকার।
গতকালের লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ২২ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ অবদান রেখেছে বিবিধ খাত। এ খাতের আটটি কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পাওয়ার বিপরীতে বেড়েছে পাঁচটির। আগের কার্যদিবসে খাতটির অবদান ছিল ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ২৯ শতাংশ লেনদেন হয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতে। এ খাতের ২১টি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে দেখা গেছে। বিপরীতে দর কমেছে ৯টির ও অপরিবর্তিত ছিল মাত্র একটির।
আট দশমিক ৭৯ শতাংশ অবদান রেখে তৃতীয় অবস্থানে ছিল বিমা খাত। এ খাতের ১০টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে, কমেছে ২৭টির ও অপরিবর্তিত ছিল দুটির।
চতুর্থ অবস্থানে থাকা জ্বালানি ও শক্তি খাতের অবদান দাঁড়ায় আট দশমিক ৫৭ শতাংশ। ১৮টি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার বিপরীতে কমেছে পাঁচটির।
এছাড়া গতকাল ব্যাংক খাতে লেনদেন সাত শতাংশ ছাড়িয়েছে। ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর হ্রাসের বিপরীতে বেড়েছে আটটির এবং অপরিবর্তিত ছিল পাঁচটির। এছাড়া লেনদেনে এগিয়ে ছিল প্রকৌশল, ট্যানারি, খাদ্য ইত্যাদি খাত।
দিন শেষে লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজের মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ২১৭টি কোম্পানির, কমেছে ১৩২টির ও অপরিবর্তিত ছিল ২৮টির। এর প্রভাবে সূচক বেড়েছে ২৯ পয়েন্ট। আগের কার্যদিবসে ৯৬ পয়েন্ট সূচক বৃদ্ধির স্মৃতি নিয়ে দ্বিতীয় দিনের লেনদেনের শেষ অংশে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। বেলা ১২টা ৩৯ মিনিটে আগের দিনের চেয়ে সূচক ৬৯ পয়েন্ট বেড়েছে এবং তা ছিল ঊর্ধ্বমুখী। সে সময় আশা করা হয়, আগের দিনের মতোই বড় উত্থান হবে। তবে দিনের শেষাংশে সেই অবস্থান থেকে সূচক কমে ৪০ পয়েন্ট, যে কারণে ২৯ পয়েন্ট যোগ করে লেনদেন শেষ হয়েছে।
আগের দিনের তুলনায় ২৯ পয়েন্ট বেড়ে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছয় হাজার ৮৮২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এছাড়া বাছাই করা কোম্পানিগুলোর সূচক ডিএস৩০ ১৫ পয়েন্ট ও শরিয়াহ্-ভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ছয় পয়েন্ট।
টানা দ্বিতীয় দিন সূচকে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট যোগ করেছে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো। বেক্সিমকো লিমিটেডের অবদান দ্বিতীয়। প্রথম কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে এক দশমিক শূন্য পাঁচ পয়েন্ট এবং দ্বিতীয়টির এক দশমিক ৮২ পয়েন্ট। এ দুটি কোম্পানি যথাক্রমে ছয় দশমিক ৬১ ও চার দশমিক ৪২ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে। এছাড়া সূচক বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে রবি, ইউনাইটেড পাওয়ার, পাওয়ারগ্রিড, ব্র্যাক ব্রাংক, বেক্সিমকো ফার্মা, ফরচুন সুজ, স্কয়ার ফার্মা ও লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট। সব মিলিয়ে ১০টি কোম্পানিই সূচক বাড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট।
বিপরীতে সবচেয়ে বেশি চার দশমিক ৩৮ পয়েন্ট সূচক হারিয়েছে গ্রামীণ ফোনের শূন্য দশমিক ৫১ শতাংশ দরপতনে। দুই মাস ধরে উত্থান শেষে পরপর দ্বিতীয় দিন সর্বোচ্চ দর হারানো সোনালী পেপারের কারণে সূচক কমেছে দুই দশমিক ৬৬ পয়েন্ট।
ডেল্টা লাইফ, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি, রেকিট বেনকিনজার, ইসলামী ব্যাংক, জেনেক্স ইনফোসিস, লিনডে বিডি, ইউনিলিভার ও বিএসআরএম লিমিটেডের দরপতনেও সূচক কমেছে সবচেয়ে বেশি। এ ১০টি কোম্পানির কারণেই সূচক কমেছে ১৬ দশমিক শূন্য সাত পয়েন্ট।