ফানুসের মাধ্যমে দুর্ঘটনাও ঘটে

আমরা সবাই ফানুসের সঙ্গে বেশ পরিচিত। এর অপর নাম আকাশ-লণ্ঠন। ফানুস হচ্ছে কাগজের তৈরি একটি বেলুনবিশেষ, যা তপ্ত ধোঁয়া বা গ্যাসের সাহায্যে আকাশে ওড়ানো হয়। খ্রিষ্টীয় নববর্ষে ফানুস ওড়ানোর বেশ প্রচলন রয়েছে। এছাড়া এশিয়া ও বিশ্বের সর্বত্র বহু শতাব্দী ধরে ঐতিহ্যগতভাবে ফানুস তৈরি করা হচ্ছে, যা খেলা বা প্রাচীন উৎসবের অংশ হিসেবে ওড়ানো হয়। ফানুস ওড়ানোর ফলে আকাশে আলোকসজ্জা বৃদ্ধি পায় এবং শোভা বর্ধিত হয়।

ফানুসের মাধ্যমে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। ফানুস জ্বলন্ত অবস্থায় কোথাও পড়লে অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়। পৃথিবীতে ফানুস থেকে সৃষ্টি হওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে ২০১৩ সালের ১ জুলাই ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসে। সেখানে এক লাখ টন পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎপাদিত দ্রব্য পুড়ে যায় এবং আনুমানিক ছয় মিলিয়ন পাউন্ডের সমপরিমাণ ক্ষতি হয়।

সম্প্রতি বাংলাদেশে খ্রিষ্টীয় নববর্ষ পালনের সময়ে অনেক ফানুস ওড়ানো হয়। কিন্তু এই ফানুসের মাধ্যমে ঢাকার বেশ কয়েকটি জায়গায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, যাতে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তবে হতাহতের কোনো ঘটনা পাওয়া যায়নি। এছাড়া ফানুস বিমান চালনার সময় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু এখন ফানুস সবার কাছে ভয়াবহ বস্তু।

জ্বলন্ত ফানুস কোনো ফসলি জমিতে পড়লে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বেড়ে যায়। আবার কোনো জীবজন্তু এই পোড়া ফানুস না বুঝে খেয়ে ফেললেও মৃত্যুর মুখে পতিত হতে পারে। জ্বলন্ত ফানুস কোনো বৈদ্যুতিক তারে বা বসতবাড়িতে বা প্লাস্টিক কারখানায় পড়লে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা থাকে। ফানুস ওড়ানোর সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। মজার ছলে ফানুস ওড়াতে গিয়ে আমাদের কারও ক্ষতি করা উচিত নয়।

ফানুস ওড়ানোর ক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেয়া উচিত। পৃথিবীর বেশ কয়েকটি জায়গায় ফানুস ওড়ানো সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে শুধু জনগণ ও পরিবেশের নিরাপত্তার জন্য। চীন ও সানিয়া শহরে বিমান চালনা ও আকাশসীমা বিঘ্নিত হওয়ার কারণে ফানুস নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জার্মানি, অস্ট্রিয়া, আর্জেন্টিনা, চিলি, কলম্বিয়া, স্পেন, ভিয়েতনাম ও ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশে ফানুস ওড়ানো সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।

বাংলাদেশেও উচিত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সমুদ্রতীরে বা খোলা জায়গায় ফানুস ওড়ানো উচিত। এতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কম থাকবে এবং জ্বলন্ত ফানুস পানিতে পতিত হবে। কিন্তু ঢাকা শহরের মতো এত জনবহুল এলাকায় অতিরিক্ত ফানুস ওড়ানো উচিত নয়। খোলা জায়গা না থাকার ফলে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও অনেক বেশি। সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও নীতিমালা বাস্তবায়ন করে এক্ষেত্রে জোর দেয়া জরুরি। একমাত্র সচেতনতাই পারে এই ফানুস নামক ভয়াবহ বস্তুর হাত থেকে রক্ষা করতে।

জেবা ফারিহা

শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০