বেসরকারি হাসপাতালে নিবিড় নজরদারি করুন

গাজীপুর শহরের একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে বন্দি অবস্থায় ২৮ জনকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব। চিকিৎসার নামে তাদের বন্দি করে রাখা হয়েছিল। ৪ জানুয়ারি দিনভর অভিযান শেষে শহরের ভুরুলিয়া এলাকার ‘ভাওয়াল মাদকাসক্ত নিরাময় পুর্নবাসন কেন্দ্র’ থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। এ সময় কেন্দ্র থেকে পরিচালক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনসহ প্রতিষ্ঠানের পাঁচ কর্মচারীকে আটক করেছে র?্যাব। খবরে জানা গেছে, মাদকসেবীদের দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করা হতো। প্রতিষ্ঠানের মালিকও মাদকাসক্ত। অভিযানের সময় নিরাময় কেন্দ্রে ৪২০ পিচ ইয়াবা পাওয়া গেছে। নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে ২০০৯ সাল থেকে কেন্দ্রটি চলে আসছিল।

খবরটির পরপরই গতকাল গণমাধ্যম প্রকাশিত হয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুর মৃত্যুর খবর। বিল পরিশোধ নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে রাজধানীর শ্যামলী এলাকার ‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল’ থেকে যমজ দুই শিশুকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেয়ার সময় পথিমধ্যে একটি শিশু মারা যায়। এর আগে জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিম মারা গেছেন শ্যামলীর একটি বেসরকারি মানসিক হাসপাতালে। পরে জানা গেল, হুমায়ুন রোডের ‘মন নিরাময়’ নামের হাসপাতালটি অনুমোদন নিয়েছিল মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র হিসেবে।

সাধারণ স্বাস্থ্য, মানসিক, শিশু কোনো হাসপাতালেই রোগীদের চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নেই। রোগীদের চিকিৎসার নামে মারধরের অভিযোগ তো রয়েছেই। ‘ভাওয়াল মাদকাসক্ত নিরাময় পুনর্বাসন কেন্দ্র’ তো ভিন্ন উদাহরণ সৃষ্টি করল।

চিকিৎসাপ্রাপ্তি মানুষের মৌলিক অধিকার। বেসরকারি খাতে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালও কাগজে-কলমে সেবার ব্রত নিয়েই কার্যক্রম পরিচালনা করে। কিন্তু হাসপাতালের বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসা না পাওয়ার ঘটনা গুনে শেষ করা যাবে না।

ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, মৃত ব্যক্তিকে ভেন্টিলেশনে রেখে রোগীর স্বজনদের থেকে বাড়তি অর্থ আদায়, হাসপাতালের বিল পরিশোধ না করায় মরদেহ হস্তান্তর না করার মতো অমানবিক অভিযোগ দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে হরহামেশাই দেখা যায়। আর গত মার্চ মাসে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থার ভয়ংকর রূপ প্রত্যক্ষ করেছেন দেশবাসী। হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মুমূর্ষু অনেক রোগীকে ভর্তি করাতে ব্যর্থ হয়েছেন রোগীর স্বজনরা। এতে অনেকের মৃত্যু হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সে, অনেকের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালের করিডোরে। এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। মানুষ শখ করে হাসপাতালে আসেন না। জীবনের চরম সংকটকালীন মুহূর্তে জীবন রক্ষার তাগিদেই তারা হাসপাতালের মুখাপেক্ষী হন। যেখানে ওষুধ সেবনের পাশাপাশি নির্মল সেবা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দেশের মোট জনসংখ্যার অনুপাতে আমাদের হাসপাতালগুলোয় আসন, চিকিৎসক ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত অন্যান্য জনবলের সংখ্যা অপ্রতুল। তাই একটু সামর্থ্যবানরা অপেক্ষাকৃত ভালো ও হয়রানিমুক্ত সেবা পাওয়ার লক্ষ্যে বেসরকারি হাসপাতালের দিকে ছুটেন। সরকারি-বেসরকারি উভয় ধরনের হাসপাতালে যাতে সাধারণ মানুষের সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়, সে বিষয়ে সরকারের আশু পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০