তৈরি হবে সুয়েজ খালের বিকল্প রুট। ইসরাইল-মিসর সীমান্ত দিয়ে নতুন একটি খাল তৈরির সম্ভাবনা নিয়ে জাতিসংঘের বাণিজ্যিক-রুট সম্পর্কিত কমিটিতে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিকল্প নৌপথ তৈরির প্রকল্পে প্রধান ভূমিকা পালনে প্রস্তুত যুক্তরাজ্য। তবে এতে উদ্বিগ্ন মিসর। বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় ১২ শতাংশ পণ্য পরিবহন করা হয় সুয়েজ খাল দিয়ে। এ নৌপথটিকে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্যের ‘লাইফলাইন’ বলা হয়।
গত ২৩ মার্চ দুর্ঘটনাবসত ২০ হাজার কনটেইনার ভর্তি এভার গিভেন নামের দানবাকৃতি জাহাজটির মাথা যখন সুয়েজ খালের তীরে বালিতে আটকে যায়, তার পরিণতি যে কত গুরুতর হতে পারে মিসর হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে তা বোঝেনি। কিন্তু পরের ছয় দিন দিনরাত ২৪ ঘণ্টা চেষ্টায় জাপানি মালিকানাধীন জাহাজটি উদ্ধার করে বিশ্ব বাণিজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জলপথটি চালুর পর পাহাড় সমান লোকসানের হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। এভার গিভেন জাহাজ আটকে রেখে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান শুরু করেছে মিসর। জাহাজটি চালানোতে কোনো ভুল হয়েছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ক্যাপ্টেনকে জেরা করা হচ্ছে। সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষ হুঁশিয়ার করেছে যে, তদন্তে সহযোগিতা না করলে জাহাজের ক্রুদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে মামলা হবে।
শুধু মিসর নয়, শত শত কোটি ডলার লোকসানের ভাগীদার হয়েছে ডজন ডজন দেশ এবং হাজার হাজার ব্যবসায়ী। এর কারণ লোহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগরের মধ্যে সংযোগকারী ১২০ মাইল দীর্ঘ এই খাল দিয়ে বিশ্ববাণিজ্যের ১২ শতাংশ পণ্য পরিবহন হয়। বিশেষ করে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্যের একটি লাইফলাইন হলো এই খালটি। কিন্তু জাহাজ আটকে যাওয়ার এই লোকসানের চেয়ে অন্য আরেকটি বিষয় এখন হয়তো মিসরের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অনেকে বিশেষজ্ঞ মতামত দিচ্ছে সুয়েজ খাল ৭ দিন বন্ধ থাকার পর চালু হলেও এমন পরিস্থিতি যে, ভবিষ্যতেও সৃষ্টি হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তরা বলছেন, সুয়েজ খালের বিকল্প নৌপথ থাকলে এ ধরনের সংকট দেখা দেবে না। এর আগেও সুয়েজ খালের বিকল্প পথের বিষয়ে কথা উঠেছিল। মুসলিম দেশগুলোর কথা না বিবেচনা করে বর্তমানে আবারও সুয়েজ খাল সংকট নিরসনে বিকল্প নৌপথ তৈরির লক্ষ্যে আবারও আলোচনা শুরু করেছে জাতিসংঘ। এটি ইসরাইলের আকাবা উপসাগর থেকে এইলাট বন্দর হয়ে ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে। এ প্রস্তাবে সমর্থন রয়েছে ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা অনেক দেশের। তবে এর মাঝে একটা স্বস্তি হলো, মিসর সুয়েজ খালের বিকল্প তৈরিতে রাজি হবে কি না? সুয়েজ খাল থেকে বছরে প্রায় ৬০০ কোটি ডলার আয় করে মিসর যা দেশটির জিডিপির দুই শতাংশের মতো। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু অর্থনৈতিক ইস্যু নয়, আঞ্চলিক ইস্যুতে প্রভাব বিস্তারেও এ জলপথের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। এ অবস্থায় বিকল্প খাল তৈরি হলে সুয়েজের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য চলে যাওয়ার আশঙ্কায় চিন্তিত মিসর। তবে বাস্তবে এটি শুধু মিসরের চিন্তা নয়, এটি পুরো মুসলমানদেরও চিন্তা বিষয়। কেননা, এই ইসরাইলি রুট তৈরি হলে তারা যেমন অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি হবে, তেমন মুসলিম দেশগুলোকে ও তাদের ওপর নির্ভরশীল করে তুলবে।
মুসলিমদের নির্যাতনের কথা না ভেবে ইসরাইলের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে গিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ইসরাইলের মধ্য দিয়ে বিকল্প নৌপথ তৈরির প্রকল্প বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্রও পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে ইসরাইলকে। সবকিছুকে মিথ্যা করে যদি সত্যিই বাস্তবায়িত হয় তাহলে ইসরাইলের দাপট আরও বেড়ে যাবে মুসলিম দেশগুলোর ওপর।
–মাজহারুল ইসলাম শামীম
শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ
ফেনী সরকারি কলেজ, ফেনী