রহমত রহমান: ২০২১-২২ করবর্ষে রিটার্ন দাখিল, কর পরিশোধ, সময় বৃদ্ধির আবেদন-এ তিনটিতে এগিয়ে রয়েছে কর অঞ্চল খুলনা। তবে কর আহরণে এগিয়ে রয়েছে বৃহৎ করদাতা ইউনিট। আবার কর অঞ্চলের মধ্যে কর আহরণে এগিয়ে রয়েছে কর অঞ্চল-৮। ই-টিআইএন নিবন্ধনধারীদের মধ্যে রিটার্ন দাখিলের হারে শীর্ষে রয়েছে কর অঞ্চল-৬ ও কর জরিপ অঞ্চল। এ দুটি কর অঞ্চলের রিটার্ন দাখিলের হার প্রত্যেকটি ৬৪ শতাংশ করে। যেখানে ৩১টি কর অঞ্চলের রিটার্ন দাখিলের মোট হার ৩৭ শতাংশ। অন্য কর অঞ্চলগুলোর মধ্যেও রিটার্ন দাখিল ও কর আহরণে ছিল প্রতিযোগিতা। যদিও ২০২১-২২ করবর্ষে ই-টিআইএনধারীর তুলনায় রিটার্ন দাখিলের হার কমেছে। সেইসঙ্গে কমেছে কর আহরণ। তবে সময় বৃদ্ধির আবেদন পড়েছে গত বছরের চেয়ে বেশি। এনবিআর বলছে, বর্ধিত সময়ে এসব রিটার্ন দাখিল এবং তার সঙ্গে কর পরিশোধ করা হলে রিটার্ন আর কর পরিশোধ গত করবর্ষকে ছাড়িয়ে যাবে।
২ জানুয়ারি পর্যন্ত এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর ২০২১-২২ করবর্ষের ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের আয়কর বিবরণী (আয়কর রিটার্ন) দাখিলের সময় শেষ হয়। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে গতবারের মতো এবারও এক মাস (৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সময় বাড়ায় এনবিআর। তবে ৩১ ডিসেম্বর শুক্রবার ও ১ জানুয়ারি শনিবার সরকারি ছুটি হওয়ায় ২ ডিসেম্বর রিটার্ন দাখিলের শেষ দিন ধার্য করা হয়। সে অনুযায়ী ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩১টি কর অঞ্চলে রিটার্ন দাখিল হয়েছে ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৬২৫টি, যেখানে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল হয়েছে ২১ লাখ ৫১ হাজার ৩২৫টি। সে হিসেবে বিদায়ী করবর্ষে রিটার্নসংখ্যা বেড়েছে এক লাখ ৪৮ হাজার ২৯৯টি। রিটার্ন দাখিল প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ৯০ শতাংশ। আর সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছেন তিন লাখ ৬২ হাজার ২৮২ জন।
দেখা গেছে, ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ই-টিআইএন নিবন্ধন নিয়েছে ৭১ লাখ দুই হাজার ১৬৯টি। তবে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ই-টিআইএন নিবন্ধন ছিল ৬২ লাখ ৭৭ হাজার ৭৬০টি। এর মধ্যে ২০২১-২১ করবর্ষে ই-টিআইএনের তুলনায় রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৩৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। ই-টিআইএনধারী ৬৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ করদাতা রিটার্ন দাখিল করেনি।
কর অঞ্চলের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২২ করবর্ষে সবচেয়ে বেশি রিটার্ন দাখিল, কর আদায় ও সময় বৃদ্ধির আবেদন পড়েছে খুলনা কর অঞ্চলে। এ কর অঞ্চলে নিবন্ধন সংখ্যা প্রায় পৌনে ছয় লাখ, যার মধ্যে রিটার্ন দাখিল হয়েছে প্রায় দুই লাখ ১১ হাজার। নিবন্ধনের তুলনায় রিটার্ন দাখিলের হার ৩৭ শতাংশ। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রিটার্ন দাখিল হয়েছে রংপুর কর অঞ্চলে। এ কর অঞ্চলে নিবন্ধিত তিন লাখ করদাতার মধ্যে রিটার্ন দাখিল হয়েছে প্রায় দেড় লাখ। নিবন্ধনের তুলনায় রিটার্ন দাখিলের হার ৩৭ শতাংশ। রিটার্ন দাখিলে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে কর অঞ্চল কুমিল্লা। এ কর অঞ্চলে রিটার্ন দাখিল হয়েছে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে কর অঞ্চল রাজশাহী। এই কর অঞ্চলে রিটার্ন দাখিল হয়েছে প্রায় এক লাখ ৩৩ হাজার। পঞ্চম অবস্থানে কর অঞ্চল-১২ প্রায় পৌনে চার লাখ নিবন্ধিত করদাতার মধ্যে প্রায় এক লাখ ২২ হাজার করদাতা রিটার্ন দাখিল করেছেন। এছাড়া যেসব করদাতা রিটার্ন দাখিল করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন-কর অঞ্চল-৩, ঢাকায় এক লাখ ২৯ হাজার; কর অঞ্চল-৪, ঢাকায় এক লাখ ১৮ হাজার; কর অঞ্চল-৬, ঢাকায় ৯৩ হাজার ৭৬৫; কর অঞ্চল ময়মনসিংহে ৯৩ হাজার ৬৮১; কর অঞ্চল বগুড়ায় ৮৯ হাজার; কর অঞ্চল গাজীপুরে ৮৪ হাজার এবং কর অঞ্চল বরিশালে ৭৫ হাজার।
দেখা গেছে, কর আদায়ের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে প্রায় ৭৪৫ কোটি টাকা। তবে কর অঞ্চলগুলোর মধ্যে কর আদায়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে কর অঞ্চল-৮, ঢাকা। এ অঞ্চল কর আদায় করেছে প্রায় ২৮১ কোটি টাকা। এছাড়া কর অঞ্চল-১১, ঢাকা প্রায় ২১২ কোটি টাকা, কর অঞ্চল-৫, ঢাকা প্রায় ১৮৬ কোটি, কর অঞ্চল খুলনা প্রায় ১২১ কোটি টাকা, কর অঞ্চল-৬, ঢাকা ও কর অঞ্চল-১০ ঢাকা পৃথকভাবে প্রায় ১৪৪ কোটি টাকা করে, কর অঞ্চল-৪, ঢাকা প্রায় ১৩৩ কোটি টাকা, কর অঞ্চল-২, ঢাকা প্রায় ১১৮ কোটি টাকা, কর অঞ্চল-৩, ঢাকা প্রায় ১০৯ কোটি টাকা, কর অঞ্চল-১, ঢাকা প্রায় ৯৭ কোটি টাকা, কর অঞ্চল-১, চট্টগ্রাম প্রায় ৯৪ কোটি টাকা, কর অঞ্চল-২ চট্টগ্রাম প্রায় ৯০ কোটি টাকা এবং কর অঞ্চল-১২, ঢাকা প্রায় ৮৮ কোটি টাকা।
সময় বৃদ্ধির আবেদনের হিসাবে দেখা গেছে, ২০২১-২২ করবর্ষে সর্বোচ্চ তিন লাখ ৬২ হাজার ২৮২টি সময় বৃদ্ধির আবেদন পড়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ প্রায় ৪০ হাজার আবেদন পড়েছে খুলনা কর অঞ্চলে। এছাড়া রয়েছে কর অঞ্চল-১২, ঢাকায় প্রায় ৩১ হাজার, কর অঞ্চল ময়মনসিংহে প্রায় ২৭ হাজার, কর অঞ্চল-১০ ও কর অঞ্চল কুমিল্লায় পৃথকভাবে প্রায় ২০ হাজারের বেশি, কর অঞ্চল রংপুরে প্রায় ১৮ হাজার করে, কর অঞ্চল রাজশাহী ও কর অঞ্চল-৩ ঢাকায় পৃথকভাবে প্রায় ১৭ হাজার করে, কর অঞ্চল সিলেট ও নারায়ণগঞ্জে পৃথকভাবে প্রায় ১৫ হাজার করে, কর অঞ্চল গাজীপুর ও কর অঞ্চল-৫ ঢাকায় পৃথকভাবে প্রায় ১২ হাজার।
