ছয় মাস দাপটের পর ডেঙ্গুর প্রকোপ কমেছে

নজরুল ইসলাম: দেশে কভিড-১৯-এর নতুন ধরন ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। বেড়েছে কভিডে শনাক্তের হারও। তবে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, নতুন বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে কেউ মারা যাননি। গত বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্তও ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যু হয়নি। আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও কম ছিল। মূলত জুন থেকে প্রকোপ বাড়তে থাকে। আর জুলাই থেকে ডিসেম্বরÑএ ছয় মাস দাপট দেখিয়েছিল ডেঙ্গু।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে, শীতে কমে। কারণ হিসেবে বলা হয়, বর্ষায় বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহিত এডিস মশার জš§ হয়। সে হিসেবে আগামী মার্চ-এপ্রিলে ডেঙ্গুর প্রকোপ আবার বাড়তে পারে। আর নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ডেঙ্গুর প্রকোপ ক্রমান্বয়ে কমে আসবে। তবে একেবারে নির্মূল হবে না।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত বছর জানুয়ারিতে ৩২, ফেব্রুয়ারিতে ৯, মার্চে ১৩, এপ্রিলে ৩, মে মাসে ৪৩, জুনে ২৭২, জুলাইয়ে দুই হাজার ২৮৬, আগস্টে সাত হাজার ৬৯৮, সেপ্টেম্বরে সাত হাজার ৮৪১, অক্টোবরে পাঁচ হাজার ৪৫৮, নভেম্বরে তিন হাজার ৫৬৭ ও ডিসেম্বরে এক হাজার ২০৭ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন।

গত বছর জুলাইয়ে ডেঙ্গুতে ১২ জনের মৃত্যু হয়। আগস্টে মারা যান ৩৪ জন। সেপ্টেম্বরে ২৩, অক্টোবরে ২২, নভেম্বরে সাত ও ডিসেম্বরে সাতজন মারা যান।

বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন চার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা সবাই ঢাকার। ওই দিন ঢাকার বাইরের হাসপাতালে কোনো রোগী ভর্তি হননি। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ২৮ হাজার ৪২৯ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এ সময় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান ২৮ হাজার ২৬৫ জন। মারা যান মোট ১০৫ জন।

নতুন বছর ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৭১ নতুন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২৮ জন। তবে এ ৯ দিনে কারও মৃত্যু হয়নি।

৯ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সাত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে চারজন ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালে তিনজন। ৮ জানুয়ারি জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে দুজন হাসপাতালে ভর্তি হন। তারা দুজনই ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ওই দিন পর্যন্ত মোট ৬৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ৭ জানুয়ারি এ সংখ্যা ছিল এক। ৬ জানুয়ারি নয়জনের মধ্যে ঢাকার তিনজন ও ঢাকার বাইরে

ছয়জন ভর্তি হন। ৫ জানুয়ারি চার নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালে দুজন করে ভর্তি হন। এর আগের দিন ৪ জানুয়ারিও একই পরিস্থিতি ছিল। ৩ জানুয়ারি ২৯ নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন, তাদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে চারজন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে রয়েছেন ২৫ জন। ২ জানুয়ারি ১১ নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে সাতজন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে রয়েছেন চারজন।

নতুন বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় (৩১ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে ১ জানুয়ারি সকাল ৮টা) চার নতুন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে দুজন ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালে দুজন ভর্তি হন।

ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, ‘শীত মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম থাকে। তাই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও কম।’

আগামী মার্চ-এপ্রিলে প্রকোপ বাড়তে পারে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। তখনকার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে প্রকোপ কতটা বাড়তে পারে।’

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ডেঙ্গু ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা এর আগের সব বছরের রেকর্ড ছাড়ায়। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়। তবে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৭৯।

কভিড-১৯ মহামারির প্রথম বছর ২০২০ সালে ডেঙ্গু থেকে অনেকটা স্বস্তিতে ছিল দেশ। সে বছর হাসপাতালগুলো এক হাজার ৪০৫ ডেঙ্গু রোগী পেয়েছিল। ১২টি মৃত্যুর ৯টি পর্যালোচনা করে ডেঙ্গুতে সাতজনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছিল আইইডিসিআর।

২০০০ সাল থেকে দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণের তথ্য জানাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে বছর সারাদেশে পাঁচ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন, যাদের মধ্যে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। এরপর ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক রূপ নিলে এক লাখের বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হন। সে বছর বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আসা ২৬৬টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ১৪৮ জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছিল আইইডিসিআর। তার আগে ২০০২ সালে ছয় হাজার ২৩২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন, মারা যান ৫৮ জন। আর ২০০১ সালে দুই হাজার ৪৩০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

২০০০, ২০০১ ও ২০০২ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপে ভোগান্তি হলেও ২০০৩ সালে সংক্রমণ অনেকটা কমে আসে। সে বছর ডেঙ্গু রোগী কমে দাঁড়ায় ৪৮৬ জনে, মারা গিয়েছিলেন ১০ জন। আর ২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আট বছরে কখনও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়ায়নি। এর মধ্যে ২০০৭ সালে ৪৬৬, ২০০৯ সালে ৪৭৪, ২০১০ সালে ৪০৯, ২০১২ সালে ৬৭১ ও ২০১৪ সালে ৩৭৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সরকারি হিসাবে, ২০১২ সালে ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু হয়।

২০১৫ সাল থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ আবার বাড়তে শুরু করে। ২০১৭ সালে কমে গেলেও ২০১৮ সালে আবার তা বেড়ে যায়। ২০১৫ সালে ৬, ২০১৬ সালে ১৪, ২০১৭ সালে ৮ ও ২০১৮ সালে ২৬ জন সরকারি হিসাবে মারা যান মশাবাহিত এ রোগে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০