আবুল কাসেম হায়দার: পারমাণবিক ক্লাবের সদস্য বাংলাদেশ। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে আমাদের পারমাণবিক বিদ্যুৎ জগতে প্রবেশ। জাতি হিসেবে আমরা এখন গৌরব করতে পারি।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে ২.৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পরিকল্পিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যা বাংলাদেশের পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর গ্রামে নির্মিত হচ্ছে। এটি হবে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রাশিয়ার রোমাটস স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি করপোরেশন কর্তৃক নির্মিত হচ্ছে।
অবস্থান, ইতিহাস: রাজধানী ঢাকা থেকে ২০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় পারুসী ইউনিয়নে রূপপুর গ্রামে প্রকল্পটি নির্মিত হচ্ছে। প্রকল্পটি পদ্মা নদীর ওপরে নির্মিত হাউস ব্রিজ ও লালনশাহ সেতুর পাশেই নদীতীরে অবস্থিত।
পাকিস্তান আমলে ১৯৬১ সালে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ১৮৬২ সালে ২০০ একর জমি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং ৩২ একর জমি আবাসিক এলাকার জন্য অধিকরণ করা হয়। ১৯৬৮ সালে ভূমি-উন্নয়ন, সাবস্টেশন ও কিছু আবাসিক ইউনিটের কাজ আংশিক করা হয়। ১৯৬৯ সালে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাতিল করে দেয়। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ১৯৭৭ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সরকার ‘পেপসি সোফরাটস’ প্রতিষ্ঠানকে ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য নিয়োগ দেয়। ১৯৮৭ সালে জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডের দুটি কোম্পানি কর্তৃক দ্বিতীয়বার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। তখন প্রকল্পের আর্থিক ও কারিগরি যৌক্তিকতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। এ স্টাডিতে ৩০০-৫০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সুপারিশ করা হয়। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ডা. এমএ ওয়াজেদ মিয়া কর্তৃক ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। সরকার কর্তৃক বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার অ্যাকশান প্ল্যান-২০০০ অনুমোদিত হয়। ২০০৮ সালে নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়। ২০১০ সালে ১ মে বাংলাদেশ সরকার ও রাশিয়া ফেডারেশন সরকারের স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি করপোরেশনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। ২০১০ সালের ২১ মে বাংলাদেশ ও রাশান ফেডারেশন সরকারের মধ্যে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবস্থারবিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর হয়। ১০ নভেম্বর ২০১০ সালে জাতীয় সংসদে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ২ অক্টোবর ২০১৩ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রথম পর্যায়ে কাজের সাংগঠনিক উদ্বোধন করেন। ৪ নভেম্বর ২০১৭ বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের অনুকূলে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের নকশা ও নির্মাণ লাইসেন্স দেয়া হয়। ৩০ নভেম্বর ২০১৭ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১নং ইউনিটের প্রথম কংক্রিট ঢালাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্লাবে পদার্পণ করেছে। আশা করা যায়, ২০২৩ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় সঞ্চালন লাইনে শুরু হবে।
নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব নিয়ম মানা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়ন, রিঅ্যাক্টরের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, পরিবেশের ভারসাম্য সংরক্ষণ প্রভৃতি কাজ যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্বাচিত পারমাণবিক চুল্লিতে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকবে:
ফুয়েল পেলেট: নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রথমটি হচ্ছে ফুয়েল পেলেট, যা অতি উচ্চ তাপমাত্রার তার জ্বালানি বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে পারে। ফুয়েল পেলেট সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। ফলে তেজস্ক্রিয় ফিশন প্রডাক্টগুলো পেলেটের ভেতরে অবস্থান করে।
ফুয়েল ক্লাডিং: ফুয়েল পেলেটগুলো রিজকোনিয়াম অ্যালয়ের তৈরি ফুয়েল ক্লাডিং দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। বিশেষ কোনো কারণে সামান্য পরিমাণ ফিশন প্রডাক্ট ফুয়েল পেলেট থেকে বের হয়ে এলেও তা এই ক্লাডিংয়ে ভেদ করতে পারবে না।
রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল: নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের জন্য বিশেষ মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নুরু ইস্পাতের প্রেসার ভেসেল তৈরি করা হয়, যা উচ্চ তেজস্ক্রিয় অবস্থায় দীর্ঘস্থায়ী হয়।
প্রথম কনটেইনমেন্ট বিল্ডিং: রিইনফোর্সড কংক্রিট দিয়ে ১.২ মিটার পুরুত্বের প্রথম কনটেইনমেন্ট বিল্ডিং তৈরি করা হয়, যা যে কোনো পরিস্থিতিতে তেজস্ক্রিয়তা পরিবেশ ছড়িয়ে পড়া থেকে বিরত রাখে।
দ্বিতীয় কনটেইনমেন্ট বিল্ডিং: নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি করার জন্য আধুনিক নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টগুলোয় প্রথম কনটেইনমেন্ট বিল্ডিং; এরপর আরও ০.৫ মিটার পুরুত্বের আরেকটি বিল্ডিং যুক্ত করা হয়, যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিমান দুর্ঘটনা প্রভৃতি থেকে প্লান্টকে সুরক্ষা করে। এই পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যের কারণে মনুষ্য সৃষ্ট ঘটনা বা দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা প্রভৃতির প্রভাব মোকাবিলা সক্ষম থাকবে এই পারমাণবিক চুল্লি।
এ পাঁচ বছরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য ছাড়াও এই প্লান্টের ডিজাইন এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প ও প্লান্ট নিরাপদ থাকবে। এ ছাড়া ৫.৭ টন পর্যন্ত ওজনের বিমানের আঘাতে এটি অক্ষত থাকবে।
নির্মাণ প্রকল্প: বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। এ উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বরে ২০২৫ পর্যন্ত। ২০২৪ সালের মধ্যে প্রকল্পের দুটি ইউনিটের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। দুটিতে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। একক প্রকল্প হিসেবে এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রকল্প। এই প্রকল্প পরিবেশবান্ধব ও আর্থিকভাবে লাভজনক বলে সরকার বলেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার পর এই প্রকল্পের স্থায়িত্ব হবে প্রায় ১০০ বছর। দেশের ১৮ লাখ পরিবার এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে। ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান এই প্রকল্পে হবে।
জরুরি কার্যাবলি সম্পাদন: মূল প্রকল্পের আগে প্রারম্ভিক কার্যাদি সম্পাদনের লক্ষ্যে নানা উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সার্বিক জ্বালানি মিশ্র পারমাণবিক শক্তি অন্তর্ভুক্ত করার যৌক্তিকতা সম্পর্কিত অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত বিশ্লেষণ সম্পন্ন করা হয়েছে এবং প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত স্থাপনা এবং এতদসংক্রান্ত অফিসের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। এছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে ‘আরএফপি’ দলিল প্রণয়ন করা হয়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ‘সাইট সেফটি রিপোর্ট’ চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সমীক্ষা পরিচালনাসহ অতীতে সম্পাদিত কার্যাবলি ও তথ্যাবলি হালনাগাদ করা হয়েছে। তাছাড়া মানবসম্পদ উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
এ প্রকল্পের দুটি প্রধান কাজ হলো আন্তর্জাতিকভাবে প্রয়োজনীয় কোডস, গাডিস এবং স্ট্যান্ডার্ডস চিহ্নিত করে এগুলোর সাহায্যে বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য পারমাণবিক নিরাপত্তা-সংক্রান্ত দলিলপত্রাদি তৈরিকরণ এবং নির্মাণসংক্রান্ত নিউক্লিয়ার রেগুলেটরি লাইসেন্সপ্রাপ্তির লক্ষ্যে যাবতীয় কার্যসম্পাদন করা হয়েছে।
পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন: রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশে নির্মীয়মাণ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভারী যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়েছে। রূপপুরের পারসোনাল চুল্লিও রাশিয়ায় তৈরি করা হয়েছে। ভিডিআর ১২০০ মডেলের এই চুল্লিতে পরমাণু জ্বালানি পুড়িয়ে মূল শক্তি উৎপাদনে সক্ষম হবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছে।
প্রকল্প দুর্নীতি: বাংলাদেশে সব প্রকল্পে কমবেশি দুর্নীতির খবর পাওয়া যায়। কিছু প্রকাশিত হয়। অনেক প্রকল্পের দুর্নীতির কোনো খবরই সাধারণ মানুষ পায় না। এ প্রকল্পের কিছু দুর্নীতি প্রকাশ পেয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করছে। আসবাবপত্রের হিসাবের টাকার মধ্যে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে। এর মধ্যে একটি বালিশ ক্রয় মূল্য দেখানো হয়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা এবং নিচ থেকে উপরে ওঠার খরচ দেখানো হয়েছে ৭০০ টাকা। এটি নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। বিচার হবে আশা করা যায়। তবে অন্য কোনো বড় দুর্নীতির খবর পত্রিকায় এখনও প্রকাশিত হয়নি।
প্রকল্পের নির্মাণব্যয় প্রাথমিকভাবে ধরা হয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ ৯২ কোটি দশমিক ৯১ কোটি টাকা।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের লাভ: দেশের বিদ্যুৎ খাতের সবচেয়ে বড় সফলতা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ। কম দূষণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে এই প্রকল্প। তবে ঝুঁকি বেশি অনেকের মতে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কিছু দুর্ঘটনাও ঘটেছে। তাই একটা ভীতি আমাদের মধ্যে কাজ করছে। সফলতার কিছু কিছু আলোচনা করা যেতে পারে।
১. বড় চেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে, আমরা পৃথিবীর পারমাণবিক ক্লাবের সদস্য পদ লাভ করছি। সম্মানের এক স্থানে আমাদের অবস্থান হচ্ছে। দেশের মানুষের কাছে সরকার দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। ভবিষ্যতে এই প্রকল্প রাজনৈতিক ইস্যু হিসাবে বেশ কাজে লাগাবে। দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন।
২. দেশের অর্থনীতিতে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। কম মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে এই প্রকল্পে। ময়লা, গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অনেক বেশি কম খরচ বহন করবে। তাতে বিদ্যুৎ গ্রাহকের সাশ্রয় হবে। পণ্য উৎপাদন খরচ কম হবে। সাধারণ মানুষ কম মূল্যে নানা রকম পণ্য ক্রয় করতে হবে। দেশের রপ্তানি ও বৃদ্ধি পাবে। রপ্তানি বাজারে দেশের রপ্তানিকারকরা প্রতিযোগিতায় সুবিধা পাবে।
৩. বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ইস্যুতে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে যাবে। পরিবেশ দূষণ কম হবে। মানুষের জীবনমানের ওপর ভালো ফলাফল আসবে। কার্বন নির্গমন ও অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর পদার্থ নির্গমনের ফলে বিশ্বে ব্যাপক জলবায়ু পরিবর্তন আসছে। একই ইস্যুতে বাংলাদেশ খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ঋতুতে নেগেটিভ প্রভাব এসেছে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, অনাবৃদ্ধি, অতি বৃদ্ধি বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত। ২০৫০ সালের মধ্যে অনেক অনুন্নত নদী-সাগর সংলগ্ন দেশগুলোর বিরাট অঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাবে।
৪. পাবনার রূপপুর এখন আর চেনা যায় না। যেন বিদেশ। যেন একটি ছোট রাশিয়া। সুউচ্চ বসতবাড়ি, অফিস ও নানা ভৌত অবকাঠামো এলাকার চেহারা পাল্টে দিয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য এখনই বেশ রমরমা। প্রচুর বিদেশির উপস্থিতিতে যেন রূপপুর ছোট একটি মস্কো শহর। মানুষ ও কাজের সুবিধার জন্য রাশিয়ান ভাষা শিখে ফেলেছে। বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাষা শেখার জন্য গড়ে উঠেছে। হাজার হাজার বিদেশি ও দেশি কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিকের বিশাল এক কর্মকাণ্ড। আগামীতে আরও ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। বহু ভালো ভালো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। পর্যটনের জন্য তৈরি হবে নতুন নতুন স্থাপনা। দেশি-বিদেশি পর্যটকের জন্য রূপপুর দর্শনীয় হয়ে উঠবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জাতীয় প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে বেশ ভালো ভূমিকা রাখবে।
সুরক্ষা বলয় প্রয়োজন: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে আন্তর্জাতিক মানের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পারমাণবিক প্রকল্পের দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে রাশিয়া সতর্কতামূলক সব ব্যবস্থা এই ক্ষেত্রে গ্রহণ করেছে। তারপরও সাবধানতা বেশি করে নেয়া কোনো অসুবিধা নেই। ধীরে ধীরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে। এবার জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬ গ্লাসগো ঘোষণা সেই বার্তায় আমাদের দিচ্ছে।
সরকার ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আশা করা যায় সুরক্ষা ঠিক ঠিকভাবে পালিত হবে। তবে সর্বশেষ, একমাত্র প্রার্থনা মহান আল্লাহর নিকট, তিনি যেন যে কোনো বিপদ আপদ, দুর্ঘটনা থেকে আমাদের এই প্রকল্পের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন।
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ও আইএফআইএল, অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ, সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম
aqhaider@youthgroupbd.com