মো. রুবাইয়াদ ইসলাম, হাবিপ্রবি (দিনাজপুর): আগামী মার্চেই চালু হচ্ছে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) মেয়েদের জন্য নির্মাণাধীন অত্যাধুনিক সুবিধা-সংবলিত আবাসিক হল। ছয়তলাবিশিষ্ট আবাসিক হলের নির্মাণ কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে। বহুল প্রত্যাশিত এ হলটিতে মার্চ মাস নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা উঠতে পারবেন বলে জানিয়েছেন নবনির্মিত হলের হল সুপার অধ্যাপক আফরোজা খাতুন। হলটিতে মোট ৬৯৬টি আসন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, অন্যান্য আবাসিক হলের তুলনায় নতুন হলটি অধিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন হবে।
জানা গেছে, নতুন এ আবাসিক হলে কোনো গণরুম থাকবে না এবং ভবনের প্রতিটি কক্ষ হবে চার আসনবিশিষ্ট। এছাড়া হলটিতে প্রধান ভবন ছাড়াও তিনতলাবিশিষ্ট আলাদা একটি ভবন তৈরি করা হয়েছে। ভবনটির প্রথম এবং দ্বিতীয় তলা ব্যবহার করা হবে ডাইনিংয়ের জন্য। পাশাপাশি পড়াশোনা করার জন্য দ্বিতীয় তলায় থাকবে রিডিং রুম। এছাড়া তৃতীয় তলায় থাকছে জিমনেশিয়াম ও কমনরুমের ব্যবস্থা।
নবনির্মিত হলের হল সুপার অধ্যাপক আফরোজা খাতুন বলেন, গত ডিসেম্বরে হল স্থানান্তরের কথা থাকলেও আমরা এখন পর্যন্ত হল বুঝে পাইনি। হলের নির্মাণ কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করছে কবে নাগাদ আমরা হলে শিক্ষার্থী উঠাতে পারব। তবে মার্চ মাসের মধ্যেই আমরা হল উš§ুক্ত করতে পারব বলে আশা করছি।”
তিনি আরও বলেন, নবনির্মিত হলটি ৭২০ আসনবিশিষ্ট হওয়ার কথা থাকলেও আসনসংখ্যা থাকবে ৬৯৬টি। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের হলে আসন বরাদ্দের সময় সিনিয়রিটিকে প্রাধান্য দেয়া হবে এবং একই ব্যাচের ক্ষেত্রে সিজিপিএ বিবেচনা করা হবে। এ সময় ওয়াইফাই ব্যবস্থার বিষয়টি পরে বিবেচনা করা হবে বলে জানান তিনি।
হলটি নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার তারিকুল ইসলাম বলেন, প্রধান ভবনের কাজ শেষ হয়েছে, কিন্তু কমন রুম ও ডাইনিং রুমের কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। এ অসম্পূর্ণ কাজগুলো মার্চের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, ভবন নির্মাণের শুরুতে পানির সমস্যার কারণে কাজ শুরু করতে অনেক সময় লেগেছিল। তাছাড়া করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কর্মচারীরা কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করেন, যার ফলে আমাদের কাজে বিঘœ ঘটে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের এমএসের শিক্ষার্থী সাবরিন সুলতানা বলেন, মেসে অবস্থানের ক্ষেত্রে আমাদের নানা রূপ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বছরভিত্তিক চুক্তিসহ উন্নয়ন ফি প্রদান কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। তাছাড়া পানির বিল, বিদ্যুৎ বিলসহ মেসের নানা ধরনের বিল পরিশোধ করা সব শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না।
তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নি¤œবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর পক্ষে এত খরচ বহন করে মেসে থাকা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। অনেক শিক্ষার্থী এসব খরচ বহন করতে না পারার কারণে তাদের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার দশা হয়। এছাড়া কয়েক হাজার শিক্ষার্থী শহরের দিকে মেসে অবস্থান করে। তাই নতুন হল দ্রুত চালু করা হলে হাবিপ্রবির পরিবহনের ওপর যেমন চাপ কমবে, ঠিক তেমনি অল্প খরচে নিজেদের ব্যয়ভার বহন করতে সক্ষম হবে শিক্ষার্থীরা।
নতুন হল নিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, হাবিপ্রবিতে আবাসন সংকটের কারণে আমাদের অতিরিক্ত খরচ বহন করে বিভিন্ন মেসে থাকতে হচ্ছে। এ হল চালু হলে অনেক শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পাবেন। এজন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সাধুবাদ জানান এবং আবাসন সংকট নিরসনের ধারা অব্যাহত থাকবে, এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য, নবনির্মিত হলের কোনো নাম এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক চূড়ান্ত করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের একটি হলসহ ছাত্রদের জন্য পাঁচটি আবাসিক হল রয়েছে। অন্যদিকে মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র তিনটি আবাসিক হল রয়েছে। এ হলটি নির্মিত হলে মেয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দূর হবে বলে মনে করা হয়।